ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বর্তমানে দিল্লিতেই অবস্থান করছেন হাসিনা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি। সম্প্রতি ফেসবুকে তাঁর ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারটিতে শেখ হাসিনাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন, দেশে গেলে অন্যায়ভাবে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য কি হবে? শেখ হাসিনা এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘জনগণের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি, জনগণের জন্য যেকোনো কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি। জনগণের কাছেই বিচার চাইব।’
‘Nunshi’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল সোমবার এমন দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার এবং ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৫৬ লাখের বেশি।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটি থেকে কিছু কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। সার্চে ‘ইমিগ্রেন্ট চ্যানেল’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়। ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি ২০০৭ সালের ১৬ মে চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। এটির ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের সঙ্গে সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিওটির শেখ হাসিনার পরিহিত শাড়ি, সাংবাদিকের প্রশ্ন ও এর উত্তরে শেখ হাসিনার বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা। এটি সেই অনুষ্ঠানেরই ভিডিও।
এসব তথ্যের সূত্রে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংগ্রহশালা সংগ্রামের নোটবুকের সাহায্যে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে আরও খোঁজ নেওয়া হয়। দৈনিক প্রথম আলোয় ২০০৭ সালের ৩ মে ‘দলের একজন কাউন্সিলর অনাস্থা আনলে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা লন্ডনে এই ঘোষণা দেন। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, খন্দকার মোস্তাক, বঙ্গবন্ধুর খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহরিয়ার ও বজলুল হুদা সম্পর্কে কথা বলেন।
ইউটিউবে ২০০৭ সালে পোস্ট করা ভিডিওটিতেও শেখ হাসিনাকে এই ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত, শেখ হাসিনার ভারতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি অন্তত দুই যুগের পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।