ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই দফায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তাতে আহমাদিনেজাদকে গরম কাপড় পরে লাঠি হাতে পোজ দিতে দেখা যায়। ছবিটির সঙ্গে গল্প জুড়ে দাবি করা হচ্ছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করা আহমাদিনেজাদ স্বেচ্ছায় মেষপালন করছেন।
গত ২৩ মে ‘Bangladesh Senior Citizen’s Forum (বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম) ’ নামের প্রায় ৭১ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপে আহমাদিনেজাদের ছবিসহ গল্পটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি করেন নুরুন নাহার আলম নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টটি আজ শনিবার (২৫ মে) বেলা ৩টা পর্যন্ত ১২০০ শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে এক হাজারের কাছাকাছি। পোস্টটির কমেন্টবক্সে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা গল্পটিকে সত্য ভেবে মন্তব্য করেছেন। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পোস্টটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের ভাইরাল ছবিটি বিবিসি ভেরিফাইয়ের সাংবাদিক শায়ান সরদারিজাদেহ’র ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়। ছবিটি গত বুধবার (২২ মে) শায়ান সরদারিজাদেহ টুইট করে লিখেন, ২০১৩ সালে ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর আহমাদিনেজাদ মেষ পালন করছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
তিনি বর্তমানে দেশটির রাজধানী তেহরানে অবস্থান করছেন। এই তথ্যের সঙ্গে প্রচারিত ছবিটি ২০১৬ সালের অক্টোবরে তোলা। ওই সময় আহমাদিনেজাদ তাঁর ৬০ তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশটির মাজানদারান প্রদেশের কান্দোলাস গ্রামে ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
টুইটটির সঙ্গে তিনি ইরানের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের লিংকও যুক্ত করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আহমাদিনেজাদের ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটিতে তাঁর সঙ্গে আরেকজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুযায়ী, আহমাদিনেজাদ নিজের ৬০ তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশটির মাজানদারান প্রদেশের কান্দোলাস গ্রামে ভ্রমণে যান। ওই সময় তিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সে অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউএসটি) শিক্ষক আব্দুল রেজা শেইখুল ইসলামির সঙ্গে গ্রামটির এক পাহাড়ে উঠেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি থেক আব্দুল রেজা শেইখুল ইসলামিকে কেটে দিয়ে কেবল আহমাদিনেজাদের ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
পরে আরও খুঁজে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স ২৪ অবজারভারসে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে তুরস্কের সোশ্যাল মিডিয়ায় আহমাদিনেজাদের ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ও দাবি করা হয়েছিল, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে মেষপালন করে অবসরযাপন করছেন। তথ্যটি সঠিক নয়। ওই সময়েই আহমাদিনেজাদ তেহরানে অবস্থান করছিলেন এবং রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগও আনা হয়েছিল।
অর্থাৎ ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বর্তমানে মেষ পালনের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। তাঁর ৬০ তম জন্মদিনে তোলা পুরোনো একটি ছবিকে এডিট করে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বর্তমান জীবন ও রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যায়
ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইউরো নিউজে গত ৮ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আহমাদিনেজাদ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। ওই সময় আহমাদিনেজাদ হাঙ্গেরির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব পাবলিক সার্ভিসে দুটি লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় ইসরায়েলি দূতাবাস ও ইহুদি সম্প্রদায় হাঙ্গেরির তীব্র সমালোচনা করে। আইইউএসটির ওয়েবসাইটেও এখনও আহমাদিনেজাদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওয়েবসাইটে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।