হযরত মুহাম্মদ (সা.)– এর নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমোদন পেতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) আবেদন করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক পেজ থেকে তথ্যটি শেয়ার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সংবাদ’ নামে ১ লাখ ১৬ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ থেকে আজ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে এমন একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটিতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি রিয়েকশন পড়েছে।
একই তথ্য নিয়ে ‘এডুকেশন নিউজ’ নামের আরেকটি পেজ থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় দেওয়া পোস্টে একই সময় পর্যন্ত ১ হাজার ২০০–এর বেশি রিয়েকশন পড়েছে।
ভাইরাল পোস্ট দুটির কমেন্টবক্সে শতাধিক মন্তব্য পড়েছে। এসব মন্তব্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্যটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কমেন্টকারী তথ্যটিকে সমর্থন করে মন্তব্য করেছেন। তবে কেউ কেউ এই নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাও করেছেন। যেমন, মুহাম্মদ আল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘বর্তমান যুগের যেই শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার যেমন অশালীন চর্চা, তাতে নবীজির নামের অসম্মান হবে।’
এইচএম হাসনাইন নামে একজন লিখেছেন, ‘এইটা না দেওয়ায় উচিত, কারণ এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাচ গান বিভিন্ন রকমের কনসার্ট হয়, এতে করে আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামের অসম্মান হবে। ইসলাম বিদ্বেষীরা আরো আক্রমণ করবে। ইসলামী অনুশাসন না আসলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে কোনো মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া উচিত।’
ফেসবুকে ভাইরাল এ তথ্য যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। পরে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা নিউজ২৪–এ ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্বনবীর নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে স্কুলের জমি দখল!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে একটি খোলা জমির ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে ‘বিশ্বনবী হযরত মুহম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) জীবন আদর্শ অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা সাইনবোর্ডের ছবিও রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়ে বিদ্যালয়ের জমি দখল করা হয়েছে। জমি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
পরে আরও খুঁজে ডেইলি ক্যাম্পাস নামের একটি নিউজ পোর্টালে ‘নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে আবেদন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে একই ঘটনা উল্লেখ করে অভিযুক্ত আ. কুদ্দুস হাওলাদারকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়, নবীজীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করা হয়েছে। তাই আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
কিন্তু প্রতিবেদনটিতে এ প্রসঙ্গে ইউজিসির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে ফেসবুকে একই বছরের অন্তত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তথ্যটি প্রচার হতে দেখা যায়। দেখা গেছে, ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামটিই বহু নেটিজেন শেয়ার করেছেন।
তবে ইউজিসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ড. একেএম শামসুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে জানান, নবীজির (সা.) নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব ইউজিসিতে আসেনি।
আজ শনিবার আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিদ্যালয়ের জমি পরিমাপ করা হয়েছে। দেখা গেছে, দাবি করা স্থানটি বিদ্যালয়ের জমির মধ্যেই পড়েনি।’