একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতা যে নামেই বলি না কেন, বিষয়টি বর্তমান সময়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। সামাজিক, আর্থিকসহ নানা কারণেই মানুষ এই একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতায় ভুগছে। বিষয়টি এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য হুমকি বলে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, মৃত্যুর প্রভাবক হিসেবে একাকিত্ব দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে একটি কমিশন গঠন করেছিল, যাতে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল ডা. বিবেক মূর্তি, আফ্রিকান ইউনিয়নের যুববিষয়ক দূত শিদো এমপেম্বা, ভানুয়াতুন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী রালফ রেজেনভানু, জাপানের একাকিত্ববিষয়ক মন্ত্রী আয়ুকো কাতোসহ সব মিলিয়ে কমিশনে ১১ জন সদস্য ছিলেন।
একাকিত্বকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আফ্রিকান ইউনিয়নের যুববিষয়ক দূত শিদো এমপেম্বা। তিনি বলেন, ‘এটি (একাকিত্ব) বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সর্বস্তরের বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে এবং এগুলোকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য কোনো বয়স বা নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই।’
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আওয়ার এপিডেমিক অব লোনলিনেস অ্যান্ড আইসোলেশন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, নিঃসঙ্গতা ব্যক্তি ও সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি এটি অকালমৃত্যুর জন্যও দায়ী। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একাকিত্ব শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও আত্মহত্যার প্রবণতার মতো মানসিক সমস্যা ছাড়াও হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাশাপাশি একাকিত্বের মধ্য দিয়ে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও তৈরি হতে পারে মানুষের মধ্যে।
ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামাজিক সংযোগের ওপর একটি কমিশন চালু করবে। গত বুধবার একাকিত্বের মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে এই প্রথম উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস।