Ajker Patrika

বাংলাদেশে কোভিড ও মাদকনীতির প্রভাব নিয়ে গবেষণা, বড় তহবিল পেলেন কানাডার গবেষকেরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৫৯
ড. জাহিদ বাট ও ড. জিওফ বার্ডওয়েল। ছবি: সংগৃহীত
ড. জাহিদ বাট ও ড. জিওফ বার্ডওয়েল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে লং কোভিড শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল উন্নয়ন এবং ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদকনীতির পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য কানাডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব হেলথ রিসার্চ (সিআইএইচআর) থেকে দুই গবেষক তহবিল পেয়েছেন। কানাডার ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ সায়েন্সেস-এর গবেষক ড. জিওফ বার্ডওয়েল এবং ড. জাহিদ বাট এই দুটি গবেষণা পরিচালনা করবেন।

বাংলাদেশে লং কোভিড চিহ্নিতকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল

ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. জাহিদ বাটের গবেষণা প্রকল্প ‘বাংলাদেশে লং কোভিড: নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং স্বল্প সম্পদযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম চিহ্নিতকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল উন্নয়ন’ সিআইএইচআর-এর প্রতিযোগিতায় এক বছরের জন্য ১ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে।

এই বিষয়ে ড. বাট বলেন, ‘লং কোভিড সংক্রান্ত গবেষণার বেশির ভাগই উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে পরিচালিত হয়েছে। তবে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা থাকায়, এই গবেষণাগুলোর ফলাফল সবক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে।’

গবেষণাটিতে নমুনা হিসেবে বাংলাদেশের একটি উপজেলায় কোভিড-১৯ পরীক্ষিত সব ব্যক্তিকে নেওয়া হবে। এরপর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত জনমিতি ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে ওই অঞ্চলে লং কোভিড কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করা হবে।

এ গবেষণায় শুধু স্বাস্থ্যগত প্রভাব নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রভাব, যেমন—জীবন-জীবিকা ব্যাহত হওয়া, আয়ের ক্ষতিসহ অন্যান্য দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। গবেষণার ফলাফল ‘পোস্ট-কোভিড সিনড্রোমের’ প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে এবং মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী ড. বাট।

এই গবেষণার মাধ্যমে এই খাতে কানাডার গবেষণা অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় হবে এবং এটি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা হলেন ড. শ্যানন মাজোভিচ, ড. ক্রেইগ জেনস এবং ড. পিটার হল। তাঁরা তিনজনই ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির গবেষক। এ ছাড়া, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের—আইসিডিডিআর, বি-এর গবেষকেরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা হলেন—মো. আতিক ইকবাল চৌধুরী, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, ফারজানা আফরোজ, আশরাফুল আলম, শামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতি, কাজী মুনিসুল ইসলাম এবং আফরুনা রহমান।

ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণা

মাদকনীতি সংক্রান্ত আরেকটি গবেষণাও সিআইএইচআর তহবিল পেয়েছে। এই গবেষণায় ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব কেমন তা যাচাই করা হবে। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়াটারলুর আরেক গবেষক ড. জিওফ বার্ডওয়েল।

বার্ডওয়েলের প্রকল্পের নাম ‘অবৈধ মাদকের ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের আচরণের কারণে সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যগত প্রভাব: ছোট শহর ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ে পুলিশ নীতির পরিবর্তন ও কার্যক্রম বিশ্লেষণের জন্য একটি মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা।’ এই প্রকল্পটি চার বছরের জন্য ৬ লাখ ৬৪ হাজার ডলার অনুদান পেয়েছেন। এ ছাড়া বার্ডওয়েল গত বছর ব্রিজ ফান্ডিং হিসেবে আরও ১ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।

বার্ডওয়েল বলেন, ‘মাদকের ব্যবহার সংক্রান্ত অধিকাংশ গবেষণা বড় শহরগুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত। কিন্তু, ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোর বাস্তবতা বোঝার জন্য গবেষণা হওয়া জরুরি, যাতে ওয়াটারলু অঞ্চলে এবং অনুরূপ অন্যান্য এলাকায় নীতি নির্ধারণ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মাদক ব্যবহারের বিষয়টি অপরাধ নয়, বরং একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাদক গ্রহণের বিষয়টিকে অপরাধীকরণের ফলে নেতিবাচক স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়ে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াটারলু রিজিয়ন পুলিশ সার্ভিস মাদক সংক্রান্ত অপরাধকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে, মাদকদ্রব্য দখলের অভিযোগ ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।’

বার্ডওয়েলের গবেষণা ২০১৬ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পুলিশের মাদক সংক্রান্ত কার্যক্রমের পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করবে এবং জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে পুলিশের হস্তক্ষেপে কী ধরনের বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে, তাও বিশ্লেষণ করবে।

এ গবেষণা প্রকল্পে বার্ডওয়েলের সঙ্গে রয়েছেন ড. ক্রিস পার্লম্যান ও ড. জেন ল। তাঁরাও ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির। এ ছাড়া টরন্টো ইউনিভার্সিটির ড. ক্যারল স্ট্রাইকও আছেন তাঁদের সঙ্গে। প্রকল্পটি ওয়াটারলু রিজিয়ন পুলিশ সার্ভিস, রিজিয়ন অব ওয়াটারলু পাবলিক হেলথ অ্যান্ড প্যারামেডিক সার্ভিসেস, ওয়াটারলু রিজিয়ন ইন্টিগ্রেটেড ড্রাগ স্ট্র্যাটেজি, ওয়াটারলু রিজিয়ন ড্রাগ অ্যাকশন টিম, ড্রাগ স্ট্র্যাটেজি নেটওয়ার্ক অব অন্টারিও এবং পিভট লিগ্যাল সোসাইটির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হবে।

দুই গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশে

বাংলাদেশসহ অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে লং কোভিড শনাক্তকরণ এবং ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদক সংক্রান্ত পুলিশের ভূমিকা পরিবর্তনের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিশ্লেষণ—উভয় গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবসম্মত সমাধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থার প্রস্তুতি, মাদক নীতির পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলো ভবিষ্যতের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরেও কিছু মানুষের মধ্যে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়, যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা এমনকি বছর ধরেও থাকতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোভিড-১৯ হওয়ার পরে কিছু মানুষের শরীর পুরোপুরি আগের মতো সুস্থ হতে সময় নেয় এবং কিছু সমস্যা লেগে থাকে—এই সমস্যাগুলোকেই সাধারণভাবে লং কোভিড বলা হয়।

লং কোভিড কাদের হতে পারে?

যাদের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হয়েছে, তাদের মধ্যে যে কারও লং কোভিড হতে পারে। এমনকি যাদের মৃদু উপসর্গ ছিল বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়নি, তাদেরও লং কোভিড হতে পারে। বে, যাদের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ গুরুতর ছিল, বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে লং কোভিড হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

লং কোভিড এর উপসর্গগুলো কী কী?

লং কোভিডের উপসর্গগুলো ব্যক্তিভেদ ভিন্ন হতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু সাধারণ উপসর্গ নিচে উল্লেখ করা হলো—ক্লান্তি বা অবসাদ: অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, সামান্য কাজ করলেই হাঁপিয়ে যাওয়া, যা বিশ্রাম নেওয়ার পরেও কমতে চায় না। শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুক ভারী লাগা, দমবন্ধ ভাব হওয়া। দীর্ঘস্থায়ী কাশি, যা সহজে সারতে চায় না। ঘন ঘন বা একটানা মাথাব্যথা। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের সমস্যা বা ব্রেইন ফগ। অর্থাৎ মনে রাখতে অসুবিধা হওয়া, মনোযোগ দিতে সমস্যা হওয়া, সবকিছু যেন ঘোলাটে লাগে।

এ ছাড়া, গন্ধ ও স্বাদের পরিবর্তন: গন্ধ বা স্বাদ কমে যাওয়া বা পাল্টে যাওয়া, যা কোভিড সেরে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। পেশি ও শরীরে সন্ধিস্থলগুলোতে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, ঘুমের সমস্যা, পেটের সমস্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা উল্লেখযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত