পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশে তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এই তাপমাত্রাকে আজ সোমবার দেশটির আবহাওয়া অফিস এবারের গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি এটাও জানিয়েছে, এই তাপমাত্রা দেশের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে।
পাক আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সাড়ে চার হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর জন্য বিখ্যাত সিন্ধের মহেঞ্জোদারো শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা বেড়ে ৫২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত এই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অতীতে রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পুরো দেশের বিচারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অতীতে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
সিন্ধের মহেঞ্জোদারো একটি ছোট শহর। গ্রীষ্মকালে এই শহরটির তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শহরটিতে মৃদু শীত পড়ে আর বৃষ্টিপাতও খুবই কম হয়। ঐতিহাসিক তাৎপর্যের পাশাপাশি বেকারি, চায়ের দোকান, মেকানিকস, ইলেকট্রনিক মেরামতের দোকান, ফল ও সবজির জন্য শহরটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে এই শহরের বেশির ভাগ দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ দেখা গেছে। ক্রেতাদের উপস্থিতিও খুবই কম।
পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মহেঞ্জোদারো শহরে চায়ের দোকান চালানো ৩২ বছর বয়সী ওয়াজিদ আলী বলেছেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে ক্রেতারা দোকানে আসছেন না। আমি এই টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে থাকি, কিন্তু কোনো ক্রেতার হদিস নাই।’
ওয়াজিদ আরও বলেন, ‘দিনে কয়েক বার করে গোসল করছি। গোসল করলে কিছুটা স্বস্তি পাই। গরম আমাদের খুব অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে।’
ওয়াজিদের দোকানের পাশেই একটি ইলেকট্রনিক মেরামতের দোকান। এই দোকানের মালিক ৩০ বছর বয়সী আবদুল খালিক। রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য তিনি দোকানের শাটার অর্ধেক নামিয়ে রেখেছেন। গরমের কারণে ব্যবসা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শহরের চিকিৎসক মুশতাক আহমেদ জানিয়েছেন, স্থানীয় মানুষেরা এ ধরনের চরম আবহাওয়ায় বসবাসের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। অতিরিক্ত উত্তাপের দিনগুলোতে তারা সাধারণত ঘরের ভেতর এবং পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন।
তাপপ্রবাহের কারণে পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। গত শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক সমন্বয়কারী রুবিনা খুরশিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পঞ্চম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ পাকিস্তান। আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত, বন্যা প্রত্যক্ষ করছি।’
পাকিস্তানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেবার দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশের তুরবাত শহরে তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। এই তাপমাত্রাকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ সরদার সরফরাজ।
আবহাওয়াবিদেরা মহেঞ্জোদারো ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোর তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে জানালেও পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি সহ সিন্ধুর অন্যান্য অঞ্চলে আরেক ধাপ তাপপ্রবাহ আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করছেন।