অনলাইন ডেস্ক
বাশার আল-আসাদের পতনের পরপরই জার্মানির কিছু রাজনীতিবিদ সিরিয়ার শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ২০১৫ সালের যুদ্ধে শরণার্থী হয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া এসব সিরীয়দের অনেকেই ইতিমধ্যে সেখানে জীবন গড়ে তুলেছেন এবং তাঁদের ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে জার্মানির উৎপাদন খাতে প্রায় ৪৩ হাজার সিরীয় কর্মরত। স্বাস্থ্য খাতে, বিশেষ করে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১০ হাজারেরও বেশি সিরীয় কাজ করছেন। সিরীয় চিকিৎসকেরা এখন জার্মানির বিদেশি চিকিৎসকদের মধ্যে বৃহত্তম দল।
একটি পেইন্টিং কোম্পানির পরিচালক উলরিখ টেম্পস নামে এক ব্যক্তি জানান, জার্মান অর্থনীতির শ্রম সংকট মোকাবিলায় সিরীয় কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি বলেন, ‘যারা চাকরিতে আছেন, তাঁদের সিরিয়ায় ফিরে যেতে বলা আমার কাছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
মোহাম্মদ রেদাতোতুনজি, যিনি ২০১৫ সালে শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে এসেছিলেন। বর্তমানে তিনি সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের একজন দক্ষ কর্মী। তাঁর ভাষায়, ‘আমার ভবিষ্যৎ এখানেই।’
তবে অনেক সিরীয় দেশে ফিরতে চাইলেও, ফেরার আগে সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও উন্নত হউক এমনটাই চান। এর জন্য তাঁরা অন্তত পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
জার্মানির পূর্বের রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্টের ইন্টিগ্রেশন কমিশনার সুজি মেবেক বলেন, ‘আমরা এই সফল শ্রমশক্তি নষ্ট করতে পারি না।’
বার্লিনের একটি ক্লিনিকে কর্মরত ৩৬ বছর বয়সী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ স্যান্ডি ইসা, বাশার আল-আসাদের পতনের খবরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই, কিন্তু স্থায়ীভাবে ফেরার কথা এখনো ভাবা যাচ্ছে না।’
হোমস শহরের এই অভিবাসী চিকিৎসকের অনুভূতি জার্মানিতে বসবাসরত অনেক সিরিয়ান শরণার্থীর দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থাকে প্রকাশ করে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত থাকায় তাঁরা নিজ দেশে ফেরা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।
২০১৫ সালে সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মর্কেলের শরণার্থী গ্রহণের সিদ্ধান্ত জার্মানিতে বিতর্কিত হয়েছিল। এরপর দেশটি ১২ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীও গ্রহণ করেছে। তবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারাল নির্বাচনের আগে, এই অভিবাসন ইস্যু দেশটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিছু রাজনীতিবিদ সিরীয়দের দেশে ফেরানোর জন্য বিমান খরচ বহনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
সিরীয়রা জার্মানির অর্থনীতি ও সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তবে তাঁরা কবে দেশে ফিরে যেতে পারবেন, তা নির্ভর করবে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির ওপর।