মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ,
প্রশ্ন: বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, হিজড়ারা দল বেঁধে মানুষের কাছে চাঁদা চেয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন অপ্রীতিকর উপায়ে একপ্রকার জোর করে তারা টাকা আদায় করে। এভাবে চাঁদা তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ কি না? ইসলামে হিজড়াদের ভরণপোষণের নীতিমালা কী? বিস্তারিত জানতে চাই। নুরুল আমিন, কুমিল্লা
উত্তর: ইসলামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা নারী, পুরুষ, হিজড়া কারও জন্যই বৈধ নয়। কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে এ ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ ভোগ কোরো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮) হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ কারও জন্য বৈধ নয়, যতক্ষণ না সে খুশি মনে তা দান করে।’ (আহমদ ও বায়হাকি)
হিজড়া বলতে জন্মগতভাবে যাদের নারী-পুরুষ উভয় যৌনাঙ্গ থাকে অথবা কোনোটাই থাকে না, তাদের বোঝায়। ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়ারা মূলত পুরুষ বা নারী; তৃতীয় লিঙ্গজাতীয় কিছু নয়। জন্মগতভাবে কিছু মানুষ যেমন খোঁজা, বোবা বা অন্ধ হয়ে জন্মায়, হিজড়ারাও সে ধরনেরই। যৌনপ্রতিবন্ধী বলা যায় তাদের। গবেষকদের মতে, প্রতি ৫ হাজারে একজন শিশু এভাবে জন্ম নিতে পারে।
ফিকহের কিতাবসমূহে হিজড়াদের লিঙ্গ চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। সে অনুসারে অধিকাংশ হিজড়ার নারী বা পুরুষ পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর ইবাদত ও উত্তরাধিকারে তার ক্ষেত্রে পুরুষ হলে পুরুষের এবং নারী হলে নারীর বিধান প্রযোজ্য হয়। পুরুষ প্রমাণিত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে নারীত্বের ছাপ এবং নারী প্রমাণিত হলে পুরুষত্বের ছাপ দূর করে ফেলা বৈধ। তবে খুবই অল্পসংখ্যক হিজড়ার ক্ষেত্রে লিঙ্গ চিহ্নিত করাটা সম্ভব হয় না। ফিকহের পরিভাষায় তাদের খুনসা মুশকিল বলা হয়। তবে তারাও পুরুষ কিংবা নারী।
শুধু চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, এই যা। ইসলামি মূলনীতির আলোকে ফকিহগণ তাদের বিধিবিধানও সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন।
(ইসলামওয়েব ডট নেট)
ইসলামে হিজড়া সম্প্রদায় অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই মর্যাদাবান। একজন নারী বা পুরুষের যেসব পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার আছে, একজন হিজড়ারও তা আছে। তাকে কোনোভাবেই এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। একজন ছেলে বা মেয়ে যেভাবে তার মা-বাবার কাছে লালন-পালন, উত্তরাধিকার এবং উপার্জনক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত যাবতীয় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখে, একই অধিকার একজন হিজড়া সন্তানও রাখে। সন্তানদের মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ না করার নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামে হিজড়ারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, বরং নিজ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সদস্য। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাবা তাদের ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে আদালত তাঁকে বাধ্য করবেন। আর তিনি অক্ষম হলে আদালত তাঁর জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতা বরাদ্দ করবেন। (ফাতাওয়া আলমগিরি) আর উপার্জন করার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জিত হলে নিজেই নিজের খরচ বহন করবেন। এ ক্ষেত্রে উপার্জনক্ষম হিজড়াদের জন্য বৈষম্যহীন কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপমতে, বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার। সরকার চাইলেই তাদের মধ্যে যাঁরা উপার্জনক্ষম, তাঁদের কর্মসংস্থান এবং অক্ষমদের জন্য যথাযথ ভাতার ব্যবস্থা করতে পারে।
উত্তর দিয়েছেন, মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক