রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘রেল নিরাপদে যাওয়ার জন্যই রেলক্রসিং দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল-সিএনজিতে মানুষের পারাপারের দায়িত্ব আমাদের নয়। রেলক্রসিং এর উপরে ট্রাক উঠে বসে থাকলে আমাদের কি করার আছে। কিন্তু এটা হবার নয়। যারা নতুন রাস্তা বানাচ্ছেন সড়কে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আমি বলব রেলের নিরাপত্তাকে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রেল ভবনে ৫৮০টি মালবাহী ওয়াগন কেনার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। ওয়াগন কেনার চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়নার সিআরআরসি কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাই জিয়েন।
রেলের আইন অনুযায়ী ট্রেন যাওয়ার আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সুবিধাতো রেলকে দিতে হবে। কিন্তু কীভাবে মোটরসাইকেল-সিএনজি রাস্তা পার হবে তার জন্য তো রেলক্রসিং করা হয়নি। যখন আমরা কোন নতুন রেল লাইন তৈরি করব, সেই লাইন যদি কোন সড়ক পথের ওপর দিয়ে যায় তখন আন্ডার পাস করার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু নতুন রাস্তা করবেন আর রেললাইনের ওপর দিয়ে সব পারাপার করবেন। আর যখন দুর্ঘটনা ঘটলে দায় রেলের ওপর দেবেন তা হবে না।
টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জানিয়ে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বিগত সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে রেলের উন্নয়ন হয়নি। এই অবস্থা থেকে বর্তমান সরকার একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রত্যেক দেশের রেল ব্যবস্থা অনেক উন্নত। ভারতের সঙ্গে আমাদের আটটি ইন্টারচেঞ্জ আছে তার মধ্যে পাঁচটি খোলা আছে আরও তিনটি খোলা হবে এবং নতুন আরও ইন্টারচেঞ্জ বাড়ানো হবে। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনে যাওয়া যাবে। সব রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। দেশের মানুষের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে রেলের গতি বাড়ানো হচ্ছে।’
বৈদ্যুতিক ট্রেনের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে রেল ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদেরও বড় ধরনের চিন্তা করতে হবে। ইলেকট্রিক নাকি গ্যাসচালিত ট্রেনে বিনিয়োগ করব। সেটা সরকারিভাবে বড় ধরনের একটা সিদ্ধান্তের বিষয়। এখন অনেক দেশেই গ্যাস চালিত ট্রেন রয়েছে।’
৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগণ কেনার বিষয়ে ২০১৮ সালের কথা হয়েছিল এত দিন পরে কেন হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একবার দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে। আবার দরপত্র প্রক্রিয়া করতে হয়েছে। এর কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। আর কিছুটা গাফিলতি আমাদের ছিল। এ প্রকল্পে মোট এক হাজার ওয়াগন কেনা হবে আজ ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন কেনার চুক্তি হলো চীনের সঙ্গে। এর পর ৪২০ ব্রডগেজে ওয়াগন কেনা হবে হিন্দুস্থান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে। যার যুক্তি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই করা হবে।’
চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫৩ মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগণ সংগ্রহের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে ১৮ থেকে ৩০ মাসের মধ্যে ওয়াগনগুলো সরবরাহ করবে। যার অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকার (জিওবি)। নতুন মিটারগেজ ওয়াগনগুলো হবে স্টেনলেস স্টিল বডির, সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে ওয়াগনগুলো, সর্বোচ্চ ১৫ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। ওয়াগনে থাকবে এয়ার ব্রেক সিস্টেম এবং পরিবেশবান্ধব হবে প্রতিটি মালবাহী ওয়াগন।
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।