বিদেশে শিক্ষা, চাকরি, স্থায়ী হওয়া ও বিয়েসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে নাগরিকেরা সনদ সত্যায়ন করান। এই কাজটি করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন নাগরিকেরা। অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়। এখন থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ কাজটি অনলাইনে অল্প খরচে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে করানো যাবে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বুধবার সমন্বিত উপায়ে অনলাইনে সহজে সনদ সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেছে।
অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা জানান, এখন অনলাইনে সত্যায়নের জন্য সেবাপ্রার্থীকে প্রথমে সনদগুলো স্ক্যান করে নিতে হবে। সরকারি মাইগভডটবিডি (mygov.bd) ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সনদগুলো আপলোড করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দ্বারা সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন হয়ে গেলে সেবাগ্রহীতা তাঁর মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস পাবেন। এই বার্তা পাওয়ার পর তিনি সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন হওয়া সনদটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
কর্মকর্তারা বলেন, উদ্বোধনের আগে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৫৬ হাজার সনদ অনলাইনে সত্যায়নের জন্য সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন সম্পন্ন হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক এপোস্টিল কনভেনশনের (১৯৬১) আওতায় এই ব্যবস্থায় সত্যায়ন হওয়া সনদ বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যাচাই করা যাবে। বাংলাদেশসহ ১২৭টি দেশ এ কনভেনশনটি অনুস্বাক্ষর করেছে। অনুস্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে আগামী ২৯ মার্চ থেকে কনভেনশনটি কার্যকর করতে হবে।
কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্র, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও স্বাস্থ্যসহ সরকারের ৭৮টি দপ্তরের বিভিন্ন ইউনিট, ১৬২টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড এই সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ চলছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয়ে যাওয়া, একই ব্যক্তির নামে চারটি পাসপোর্ট (এমআরপি) হওয়া ও অনলাইনে ভূমিসেবার অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধির উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘মাইগভডটবিডি প্ল্যাটফর্মটি পুরোপুরি নিরাপদ কিনা? অনলাইনে আক্রমণ হলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা?’
যেসব দেশ এখনো এপোস্টিল কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেনি, সেসব দেশের ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে, এমন সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন উপদেষ্টা।
ইউরোপের অন্তত ১০টি দেশসহ অনেক দেশ এখনো কনভেনশনটি অনুস্বাক্ষর করেনি। পুরো বিষয়টিতে যাতে দুর্নীতির সুযোগ না থাকে, তেমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘অনলাইনে সনদ সত্যায়নের কাজটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে ভালো সমন্বয় ছিল। সব ক্ষেত্রে নাগরিকদের মানসম্পন্ন সেবা দ্রুত দিতে সরকারের সব দপ্তরের কাজে সমন্বয় জরুরি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘সনদ সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় এখনো কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেকে এক শিক্ষা বোর্ডের সনদ ভুল করে অন্য বোর্ডে সত্যায়নের জন্য আপলোড করে। সার্ভারে জটিলতার জন্য গতি অনেক সময় ধীর থাকে। এমন জটিলতাগুলো কাটাতে হবে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সনদগুলো স্ক্যান করে আপলোড করতে হচ্ছে। এটা একটা সীমাবদ্ধতা। যখন সনদগুলো ইস্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সত্যায়ন হবে, তখন প্রক্রিয়াটি অনলাইন হিসেবে পূর্ণতা পাবে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান দেশের সব সেতু ও সড়কে টোল আদায়সহ পুরো পরিবহন ব্যবস্থা অনলাইন সুবিধার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘থানা পর্যন্ত পুলিশের সব ইউনিট আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এপোস্টিল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এতে এ ক্ষেত্রে পুলিশের কারও অনিয়মে জড়িত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে সনদ সত্যায়নের মাধ্যমে বছরে মানুষের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষামূলকভাবে এরই মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষাসনদ সত্যায়ন করেছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডই করেছে প্রায় ১৩ হাজার।’
ক্ষেত্রভেদে সনদ সত্যায়নের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই থেকে পাঁচ দিন লেগেছে। এর আগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত লেগে যেত বলে জানান ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনূর রশীদ ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ ও আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এসএম এরশাদুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।