হোম > জাতীয়

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: স্বস্তি ফিরছে না জনমনে

 শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার কেরানীগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা কয়েক ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় রেখেছিল মানুষকে। বিনা রক্তপাতে ব্যাংকটিতে জিম্মি ঘটনার অবসানে মানুষ স্বস্তি পেলেও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভয়-আতঙ্ক কাটছে না। বরং একের পর এক খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির ঘটনা মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েক দিন পুলিশহীন থাকায় চরম অবনতি ঘটেছিল আইনশৃঙ্খলার। কিন্তু পরে থানা সচল ও পুলিশ কাজে ফিরলেও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরছে না। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বোধ ফিরিয়ে আনাই প্রশাসন ও পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা।

সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে আমরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অনেকে দায়ী করছেন পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে। তাঁরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ৫ আগস্ট। হামলা, লুট, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়। কয়েকজন পুলিশ সদস্য প্রাণও হারিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন পর পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরলেও তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। সহায়তার জন্য সেনাসদস্যরা থাকলেও পুলিশ সদস্যরা এ শঙ্কার কারণে পুরোদমে মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন না। এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। দ্রুতই অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি উদাহরণ গতকাল কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় তিন কিশোর-তরুণের ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা। খেলনা পিস্তল ও ছুরি নিয়েই তারা ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনীর চেষ্টায় প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টার আত্মসমর্পণ করে তারা। অবসান ঘটে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে গত বুধবার রাত ৯টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ প্রান্তের ঢালে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল হাসান (২৩)। এর ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে রাত ১২টার দিকে মতিঝিলে বিমান অফিসের কাছে মারধরে আহত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হালিম (৬৩) রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। একই রাতে আফতাবনগরে ছুরিকাঘাতে খুন হন এক গৃহবধূ। তবে পরিবারের অভিযোগ, স্বামীই তাঁকে খুন করেছেন।

বুধবার রাজধানীর অদূরে টঙ্গীতে তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী ‘গুপ্তহত্যা’র শিকার হয়েছেন চলতি সপ্তাহে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান চলাকালে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় স্কুলছাত্রসহ দুজন ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন হচ্ছে। পুলিশের তথ্যই বলছে, গত দুই মাসে দেশে অন্তত ৩৩টি খুন হয়েছে। খুনের পর লাশগুলো ফেলে দেওয়া হয় ঝোপঝাড়ে।

শিক্ষার্থী খুনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে দুই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা একজনের নির্মম হত্যা একদিকে সমাজের নিরাপত্তাব্যবস্থার ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে; অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

ছিনতাই হচ্ছে হরহামেশা। রাতে বা নির্জন এলাকায় শুধু নয়, জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যেও ছিনতাই হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে শাহবাগের মতো ব্যস্ত এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন মগবাজারের গৃহবধূ আয়েশা আক্তার। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুরি ঠেকিয়ে আয়েশার কাছ থেকে আইফোন ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় তিন যুবক। তিনি বলেন, ‘শাহবাগে থানার কাছে এমন ঘটনা চিন্তাও করা যায় না। দুই দিন পরও ঘটনাটি মনে হলে আতঙ্কে কেঁপে উঠি আমরা।’

ডাকাতি, চুরিও বেড়েছে। কিন্তু ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির সব ঘটনার অভিযোগ থানা পর্যন্ত যাচ্ছে না। ফলে এসব অপরাধের প্রকৃত চিত্রও জানা যাচ্ছে না।

ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য এবং প্রকাশ্যে চাপাতি-রামদা নিয়ে হামলা কিংবা দৌড়াদৌড়ির বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একদল তরুণ এক তরুণীকে ঘিরে ধরে টানাহেঁচড়া করছে, ওড়না টেনে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে আর তরুণী দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন—এমন দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছেন মানুষ। বনানীতে এক সন্ধ্যায় জটে আটকে থাকা যানবাহনের সামনে চাপাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই তরুণের ছিনতাইয়ের দৃশ্যও মানুষকে শঙ্কিত করেছে।

নোয়াখালীতে সম্প্রতি মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সময় চালককে হত্যা করা হয়েছে। সৈয়দপুরে ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণের টাকা তুলে বের হওয়ার পর এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন।

ঢাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু তালেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরাপত্তার দুর্বলতাই এমন ঘটনা বারবার ঘটানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। রাস্তাঘাটে এখন আর পুলিশের টহল দেখা যায় না। সড়কবাতি জ্বলে না। কেউ বিপদে পড়ে থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয় না। তাহলে মানুষ সাহস পাবে কীভাবে? এসব দেখে অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও প্রায় একই কথা বলছেন। তাঁদের মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন করে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার ভয়েও অনেক পুলিশ সদস্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এসব কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, যা জনজীবনে উদ্বেগ তৈরি করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তারা নৈতিক সংকটে পড়েছে। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেখানে অপরাধ, সেখানেই তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তা হলেই মানুষের মন থেকে ভয় কাটতে থাকবে। পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী বাংলাদেশ: লুৎফে সিদ্দিকী

মার্চ-এপ্রিলে মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি শুরু হতে পারে: প্রবাসী কল্যাণ সচিব

জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন থেকে সীমা জামানের পদত্যাগ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করে যা বললেন সারজিস

নেতৃত্বশূন্য সংগঠন, প্রশাসকে অস্বস্তি

৫ আগস্টে সংসদে লুটপাট: শুধু বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে খরচ ৭৩ কোটি টাকা

রুশ কোম্পানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, আসছে না পুলিশের হেলিকপ্টার

প্রাথমিক শিক্ষকেরই প্রাপ্য সর্বোচ্চ সম্মান

এক স্থানের জনপ্রতিনিধি কীভাবে গোটা জাতির আইন প্রণয়ন করেন: সলিমুল্লাহ খান

ট্রাম্পের প্রথম দিনের আদেশ: বাংলাদেশের কিছু স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

সেকশন