হোম > জাতীয়

শিশুদের কোলাহল ও বড়দের ঢল

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা

সিসিমপুর ছাড়াই চলছে এবারের শিশুপ্রহর। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বইমেলার দিকে গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিল একদল কচিকাঁচা। ওদের মুঠোতে ধরা বাবা-মায়েদের আস্থার আঙুল। ফটক খুলতেই ওরা কলরব করে ঢুকে পড়ল মেলার শিশুদের আঙিনায়। তারপর মেতে উঠল বই দেখা ও কেনায়। ছবি তোলা বা সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোকে খোঁজা নিয়েও ব্যস্ত ছিল অনেক শিশু। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে মেলার শিশুপ্রহরের শুরুটা ছিল এমনই।

বেলা যত বাড়ে, শিশু দর্শনার্থীর সংখ্যাও বেড়ে চলছিল। বিকেল নাগাদ মেলায় শিশুদের কোলাহল ছাপিয়ে নামে বড়দের ঢল। মেলার প্রথম শুক্রবার হওয়ায় টিএসসি থেকে কার্জন হল পর্যন্ত লোকে থইথই করছিল যেন।

বইমেলার শিশুচত্বরটি এবার করা হয়েছে আরও রঙিন। বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফটকটি দিয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশ করলেই হাতের ডানে চোখে পড়বে ‘শিশুচত্বর’ লেখা সুদৃশ্য ফটক। ভেতরে শুধু শিশু-কিশোরদের উপযোগী বইয়ের পসরা সাজিয়েছেন প্রকাশকেরা। গতকাল দর্শনার্থীর ভিড়ের সঙ্গে সংগতি রেখে বিক্রিও হয়েছে ভালো, জানালেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। কিন্ডার বুকের বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আজ মেলার প্রথম শুক্রবার ছিল। তাই অনেক শিশু এসেছে। বিক্রিও বেশ ভালো। ছড়া, গল্প ও সাধারণ জ্ঞানের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

ছোট্ট আরশী ওর ফুফুর সঙ্গে এসেছে। আরশী বলল, ‘গল্পের বই কিনেছি। আর একটা ছবির বই কিনব।’ ওর হাতে দেখা গেল ঈশপের চিরন্তন নীতিকথার গল্পের বই।

ঝিঙেফুলের ব্যবস্থাপক মোস্তফা বাবুল বলেন, ‘আজকে বিক্রি অনেক ভালো। তবে সিসিমপুরের আয়োজন থাকলে মেলায় শিশুদের এলাকাটা বেশি জমে। এবার তা নেই।

বেশ কয়েকজন মা-বাবাকে খুঁজতে দেখা গেল বাচ্চাদের জনপ্রিয় শিক্ষামূলক টিভি অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এর স্টল। মার্কিন টিভি অনুষ্ঠান ‘সেসামি স্ট্রিট’-এর আদলে তৈরি বাংলাদেশি সংস্করণটি। এর ইকরি, হালুম, টুকটুকি নামের বর্ণিল চরিত্রগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে অমর একুশে বইমেলার শিশুচত্বরকে মাতিয়ে রাখত। এবার ‘সিসিমপুর মঞ্চ’ না থাকায় অনেক শিশুর মন খারাপ। মায়ের সঙ্গে আসা মাহবুব তাসিন তাদের একজন। তাসিনের মা বললেন, ‘ছেলেকে সিসিমপুরের স্টল দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি, নাই। তাই ওর মন খারাপ।’

সিসিমপুরের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি বাবদ যে অর্থ দেয় মার্কিন দাতা সংস্থা, সেখান থেকে এবার অর্থ পাওয়া যায়নি। তাই এবার মেলার আয়োজনটিও করতে পারেনি সিসিমপুর।

নতুন বই

ঐতিহ্য এবং হিস্টোরিক্যাল ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটির যৌথ প্রকাশনায় বের হয়েছে ‘অদেখা ১৯৭৪: দুর্ভিক্ষের বাংলাদেশ’। বইটির ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই বইটির প্রকাশ।

চীনের জনপ্রিয় লেখক সুং থোং-এর উপন্যাস ‘আমার সম্রাট জীবন’ বের করেছে আহমদ পাবলিশিং হাউস। অনুবাদ করেছেন শামীম আহসান মহেব উল্লাহ। একজন অযোগ্য মানুষকে ক্ষমতায় বসালে কোনো দেশের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, এই উপন্যাসে তারই উপস্থাপন।

দিব্যপ্রকাশ বের করেছে হেনরি জি-এর লেখা কাজী মাহবুব হাসানের অনুবাদের বই ‘পৃথিবীতে জীবনের অতি সংক্ষিপ্ত একটি ইতিহাস’। ১২টি অধ্যায়ে ৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস এতে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৪টি।

চীনা দূতাবাসের আয়োজন

গতবারের মতো এবারও চায়না বুক হাউসের সামনে ছিল চীনা দূতাবাসের আয়োজন। পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য ছিল ড্রাগন ডান্স, চীনা চা, সুগার পেইন্টিং, আর্কিটেকচার গেম, ক্যালিগ্রাফিসহ বেশ কিছু আয়োজন। বিকেলে সেখানে আসেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘চীন আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আগামী বছর ১০টা বই যৌথভাবে প্রকাশ করার ব্যাপারে কাজ করছি। ৫টি চীনা ভাষার ধ্রুপদি সাহিত্য বাংলায় এবং বাংলা ভাষার ৫টি ধ্রুপদি সাহিত্যকর্ম চীনা ভাষায় অনুবাদ হবে। ১০টা বই দিয়ে শুরু করছি। সামনে বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।’

চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় চলচ্চিত্র নিয়েও কাজের উদ্যোগের কথা জানান পেশাগত জীবনে আলোচিত এই চলচ্চিত্রকার উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশের সঙ্গে চিকিৎসাসেবায় চীনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য তিনটি হাসপাতাল তৈরির কথা জানান। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিরা যাতে সহজে ভিসা, টিকিট ইত্যাদি সেবা পায় এবং কম টাকায় যাতে চিকিৎসা নিতে পারে, সে ব্যাপারে চীন সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।

আয়োজন

অমর একুশে পালনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোরদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে মোরশেদ শফিউল হাসানের সভাপতিত্বে হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুরশিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ।

সামজীর আহমেদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গোলাম মুরশিদের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসচর্চায় পথিকৃৎ সমতুল্য। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রাতিষ্ঠানিকতা পেলে গোলাম মুরশিদ হবেন তার পুরোধা ব্যক্তি। বাংলা সাহিত্যের প্রত্যক্ষ ইতিহাস না লিখলেও তাঁর ইতিহাসচর্চা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।

জুলাই গল্পমঞ্চ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এর শহীদ স্মরণে গতকাল অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকতিজা আহসান ও কবি মৃদুল মাহবুব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মোসা. ইসমত আরা এবং কবি মুহাম্মদ ইসমাইল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আরিফুল হাসান ও আফরোজা পারভীন। ছিল মো. ফরিদুল হকের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মাটির সুর সংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী জি এম জাকির হোসেন, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মাকসুদুর রহমান মোহিত খান, চম্পা বণিক, মুর্শিদা নাহিদ ও শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে আজ শনিবার বেলা ১১টার পরিবর্তে বইমেলা শুরু হবে বেলা ২টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহরও।

আ.লীগের নেতারা পুলিশের নজরে

ঋণখেলাপি হলেই বাতিল হবে সংসদ সদস্য পদ

ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসব শুরু

নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে ২০২৬-এর জুনের মধ্যে, প্রেস উইংয়ের বিবৃতি সংশোধন

রাজধানীতে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজনে যা যা থাকছে

ভারত থেকে ৩৬ হাজার টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ল জাহাজ

১২০ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ইয়াঙ্গুনে পৌঁছাল নৌবাহিনীর জাহাজ

ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন, দ্রুত সংস্কারের তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার: বিবৃতি

রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান

মার্চে ৫৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬০৪: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন