শ্রমিকদের দেনা-পাওনাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মামলা করতে হয় শ্রম আদালতে। সেই আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সুযোগ আছে। আপিল ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে আছেন একজন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য। সদস্য বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন আইনজীবীরা। অথচ এক বছর ধরে চেয়ারম্যান পদই ফাঁকা। এতে বাড়ছে মামলাজট। ভোগান্তি বেড়েছে বিচারপ্রার্থীদের।
জানা গেছে, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. ফারুকের নিয়োগ বাতিল করতে আইন মন্ত্রণালয় গত বছরের ৯ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, আপিল ট্রাইব্যুনালে সঠিক সময়ে এবং নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে না। মামলার দৈনিক কার্যতালিকা হালনাগাদ না করার কারণে বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হওয়া, মামলার নথি খুঁজে না পাওয়া, আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর পরই চেয়ারম্যানের নিয়োগ বাতিল করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
চেয়ারম্যান পদ ফাঁকা থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানি। চেয়ারম্যান দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া হবে। কাজ চলছে।’
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ২১৮(৩) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অথবা অতিরিক্ত বিচারক। আর ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অথবা অতিরিক্ত বিচারক অথবা জেলা জজ হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর কর্মরত কোনো বিচারক। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সদস্যদের মধ্য থেকে যিনি জ্যেষ্ঠ, তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ১ হাজার ১০৭টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন ১৮৫টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে দুটি মামলার বিচারকাজ।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অধীর চন্দ্র বালা বলেন, মামলার সংখ্যা বিবেচনায় সদস্যের আরেকটি পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফারুকের (এম ফারুক) নিয়োগ বাতিল করা হয় গত বছরের ২৫ এপ্রিল। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়াল।
ঢাকা লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে দ্রুত চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে তিনটি এজলাসে বিচারকাজ চললে মামলা নিষ্পত্তির যে গতি থাকত, এখন সেটি নেই। বিচারপ্রার্থীরা খুব অসহায় বোধ করছেন। এখানে এসে কাউকে কাউকে পাঁচ-সাত বছর অপেক্ষা করতে হয়, ফলে অনেকেই বিচারের প্রত্যাশা ছেড়ে দেন। তার মনের মধ্যে বিচারহীনতার জায়গাটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।