নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ১ হাজার ৫৯৯টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কোনো হদিস নেই। এ ছাড়া এর আগে দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো ব্যক্তিরা কিসের ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন—সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
আজ সোমবার তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন নিম্নমানের ইভিএম কিনে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কেনা ইভিএমগুলো ইসির প্রধান কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয় ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) সংরক্ষিত আছে। তবে অভিযানের সময় ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ১ হাজার ৫৯৯টি মেশিন কোথায় আছে, সে বিষয়ে কোনো হদিস দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের সময় টিম আরও দেখতে পায়, ইভিএমগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে, যেগুলোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কর্মক্ষম বলে মনে হয়নি। ইসির প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টি মেশিনের মধ্য থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে কয়েকটির অপারেশনাল ক্যাপাসিটি যাচাই করা হয়। যাচাইয়ের সময় মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায়, যা নিম্নমানের মেশিন কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও ইভিএমগুলো মানসম্পন্ন নয় বলে মতামত দিয়েছে।
এর আগে দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো ব্যক্তিরা কিসের ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক। পরে ইসি থেকে অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে রোববার ইভিএম কেনায় অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইসিতে অভিযান চালায় দুদক। অভিযান শেষে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক নূর আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ইসির নিম্নমানের ইভিএম কেনার বিষয়ে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ২০১৮ সালে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০০ মেশিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়। র্যানডমের মাধ্যমে ইসিতে সংরক্ষিত মেশিনগুলোর মধ্যে তিনটি মেশিন পরীক্ষা করে দেখি। এতে দুটি ভালো এবং একটি অচল পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘ইসিতে ৬১৮টি, বিএমটিএফে ৮৬ হাজার ও আঞ্চলিক অফিসে ৬২ হাজার মেশিন সংরক্ষিত রয়েছে। নিম্নমানের মেশিন কেনার ব্যাপারে কিছু রেকর্ড সংগ্রহ করেছি। বাকি রেকর্ডপত্রে রিকুইজিশন দিয়েছি। নিম্নমানের মেশিন বেশি দামে কেনার অভিযোগ ছিল। রেকর্ডপত্র চেয়েছি। সেগুলো পেলে প্রতিবেদন দাখিল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখার জন্য রেকর্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে বলতে পারব। কমিশন বলেছে, তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করবে। এ জন্য আইটি এক্সপার্ট প্রয়োজন হলে নিয়োজিত করব। আমরা একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি পেয়েছি।’