বাজারে বিক্রি হওয়া ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই খোলা তেল, যা অজ্ঞাত উৎস থেকে আসে। এতে কোনো কোম্পানির নাম-ঠিকানাও থাকে না। এসব তেলে নানা ধরনের অপদ্রব্য মিশ্রণের আশঙ্কা রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব তেলের মান নিয়ে রয়েছে গুরুতর প্রশ্ন।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় ভোজ্যতেলের কাঁচামালে মাত্রাতিরিক্ত পারদের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আজ (বুধবার) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) আয়োজিত ‘সুরক্ষিত ভোজ্যতেল: উন্নত ভবিষ্যতের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. নাজমা শাহীন জানান, ক্রুড অয়েল পরীক্ষায় পারদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা পরিশোধনের পরও সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, নন-ব্র্যান্ডেড সয়াবিন তেলে অন্যান্য তেল বা অপদ্রব্য মেশানো হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ ভোজ্যতেলজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তিনি গেইনকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভোজ্যতেলে ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের পরিচালক সুলতান আলম বলেন, স্বাস্থ্যগত সমস্যার একটি বড় কারণ হলো ভোজ্যতেল। তাই খোলা তেল বিক্রি বন্ধে ব্যাপক প্রচার চালানো প্রয়োজন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
গেইনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার বলেন, তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা জরুরি। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গবেষণালব্ধ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান রেস্তোরাঁর মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ঘোষণা দিন যে আপনার রেস্টুরেন্টে খোলা তেল ব্যবহার করা হয় না। এতে ভোক্তারা বুঝতে পারবেন কোনটি নিরাপদ।’ তিনি ফর্টিফায়েড ভোজ্যতেল ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন এবং মডেল উপজেলা গঠনের পরামর্শ দেন।
একটি ভোজ্যতেল কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। তাই সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন প্রধান বিষয় হওয়া উচিত, ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ নয়। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সেমিনারে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানির প্রতিনিধি, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বিএফএসএ কর্মকর্তারা, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, গেইন, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।