হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

ভুল ও ভোগান্তি

সম্পাদকীয়

আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ০০

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চাইলেন আমদানি করা গুঁড়া দুধের দাম কেন বেশি। একজন স্টকহোল্ডার জানালেন, বিএসটিআই অর্থাৎ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের ল্যাব টেস্ট চার্জ বেশি। এই তথ্য জেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিল্পসচিবকে নির্দেশ দিলেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার। বলা হয়েছিল আমদানি করা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান পরীক্ষণ, ছাড়পত্র প্রদান ও ফি আদায়সংক্রান্ত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তদন্ত করতে।

২ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআই অধিশাখা থেকে অতিরিক্ত সচিব মু. আনোয়ারুল আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাঁরা তিন দিন পর চট্টগ্রামে যান ঘটনা তদন্ত করতে। তদন্ত শেষে শাস্তি হয় বিএসটিআই চট্টগ্রামের সাত কর্মকর্তার। আটকে যায় তাঁদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কতটা স্বচ্ছ ছিল ওই তদন্ত? আজকের পত্রিকায় ‘বিএসটিআইয়ের সাত কর্মকর্তার শাস্তি ভুলে’ শিরোনামে ১৩ জানুয়ারি যে খবরটি ছাপা হয়েছে, তা থেকে জানা যাচ্ছে তদন্তের ভিন্ন গল্প। শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তারা জানান, আমদানি করা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান পরীক্ষণ, ছাড়পত্র প্রদান ও ফি আদায় শাখার কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বরং এই তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট—নয় এমন সেকশনের ৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়। তাঁদের মধ্যে আবার দুজন কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা দিয়ে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর বাকিরা পেয়েছেন বিভিন্ন ধরনের শাস্তি। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ব্যাপার হলো, আমদানি করা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান পরীক্ষণ, ছাড়পত্র প্রদান ও ফি আদায়সংক্রান্ত সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) শাখার প্রধান নুর মোহাম্মদ মোস্তফাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে উল্টো দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি!

সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেই অন্য সেকশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার যুক্তি কী? এই প্রশ্নের উত্তর কি আছে তদন্ত কমিটির কাছে? দুজন কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বাকিদের শাস্তি দেওয়ার কারণ কী? কেনইবা তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সিএম শাখার প্রধানকে বিনা জিজ্ঞাসাবাদে পদোন্নতি দেওয়া হলো? এখন কি অনিচ্ছাকৃত ‘ভুল’ হয়েছে বলে প্রচার করবে তদন্ত কমিটি? এই ‘ভুলে’ কি কমিটির শাস্তি হওয়া উচিত নয়? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই তদন্তে অভাব রয়েছে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের।

শাস্তি পাওয়া ভুক্তভোগীদের আপিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে চলতি মাসেই। এর মধ্যে যদি তাঁরা ন্যায়বিচার না পান তাহলে বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেভাবে বর্তমান বিচার বিভাগও আহত হবে।

এ রকম অনেক ঘটনায় এ দেশে ‘ভুল’ করে শাস্তি হয় অনেকের। এতসব ভুলের প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হতে আইন ও বিচারও একসময় মৃত্যুবরণ করে ফেলে কি না—জনগণের মনের এই ভয় কাটাতে সরকারকেই সংস্কার করতে হবে বিভাগটির।

বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব

সহিংসতা হয়নি তা নয়

রিওভাইরাস: সচেতনতা জরুরি

সেকশন