ক্রীড়া ডেস্ক
কে বলে আর্জেন্টিনা আর জেতে না? শিরোপা জিততে না পারার কারণে ‘আর্জেন্টিনা আর জেতে না’ বলে এই দেশের ব্রাজিল ও জার্মানি সমর্থকেরা যে মানসিক নির্যাতন চালাত আকাশী-নীল সমর্থকদের, সেটি বুঝি সমাধিস্থ হলো। এখন সেই ব্যঙ্গ উল্টো ‘বুমেরাং’ হয়ে তাড়া করছে আর্জেন্টিনা বিরোধী সমর্থকদের।
গত তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল তো আর্জেন্টিনায়। এ সময়ের মধ্যে জিতেছে চারটি শিরোপা! ২০২১ সালে মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকা, কাতারে ২০২২ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ফাইনাল জিতে ৩৬ বছর পরে বিশ্বকাপ, একই বছর ওয়েম্বলিতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে ফিনালিসিমা—বিশ্ব, মহাদেশীয় ও সুপার সব শিরোপায় তো লিওনেল মেসির ছোঁয়া পেল। বাকি কিছু আছে?
তিন বছর পর যেন তাঁরই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। আবারও যে কোপা জিতল আর্জেন্টিনা! এবার ফ্লোরিডায় ফাইনালে হারাল কলম্বিয়াকে। সেটিও গত টুর্নামেন্টের ফাইনালের মতো ১-০ গোলে। তবে কী বিশ্ব মঞ্চটা আবারও হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনার? সেই উত্তরের জন্য না হয় আরও দুই বছর অপেক্ষা করা যাক। এখন আপাতত কোপা ধরে রাখার আনন্দ ও উরুগুয়েকে হারিয়ে টুর্নামেন্টর সর্বোচ্চ ১৬ শিরোপা জয়ের উদ্যাপনে মেতে ওঠার সময়।
এখন মেসিরাও খুশি, খুশি এ দেশের আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও। খুশি মাশরাফি বিন মর্তুজাও। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আবারও মেসিদের হাতে কোপা দেখে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আর কিছু জিততে দেখার বাকি নেই...। আসলেই বিশ্বকাপ জেতার পর চাওয়া ওখানেই শেষ হয়ে গেছে, ঐ কাপটাই একবার জেতা দেখতে চেয়েছিলাম। আজ অবশ্য ডি মারিয়ার জন্য জয়টা দরকার ছিল। পুরো বিশ্বকাপে গালি খাওয়া লাওতারো মার্তিনেজ এই কোপায় সর্বোচ্চ গোল করে ফেলল, তাও ফাইনালসহ যেখানে আবার মেসি নাই। আর্জেন্টিনা এখন মেসিবিহীন ও দারুণ দল সেটা আবারও করে দেখাল। ভামোস আর্জেন্টিনা, তোমরা যা দেখিয়েছো, শেষ তিন বছরে তাতে আমার এই জীবনে ফুটবল থেকে আর কিছু দেখার নেই।’
তবে কী আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন মাশরাফি! হতেই পারেন। আর্জেন্টিনা যে এখন ‘আর জেতে না’ থেকে ‘আর হারে না’ দল! মেসিরা যেভাবে ছুটছেন, আটকায় সাধ্য কার! গত বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে অঘটনের শিকার না হলে এতদিন অপরাজেয় থাকার রেকর্ডটাও তাদের হতো। সেই হারের পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিওনেল স্কালোনির দল টানা ২৬ ম্যাচ অপরাজিত। তার আগে অপরাজিত ছিল ৩৬ ম্যাচ। ভাবুন তো—২০০৭ ও ২০১৫ কোপা আর ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে না হারলে মেসির হাতে কয়টা আন্তর্জাতিক শিরোপা থাকত? রেকর্ড আট ব্যালন ডি’অরের সমান আট আন্তর্জাতিক শিরোপা (অলিম্পিক বাদে)। সেই অপূর্ণতা থেকে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা ৩৭ বছর বয়সী মহাতারকার আর কিছুই জেতার বাকি নেই। এখন কোনো মেসি ভক্ত সুনির্মল বসুর, ‘সব পেয়েছির দেশে’ কবিতাকে একটু পাল্টে দিয়ে বলতে পারে, ‘গল্প না ভাই, কল্পনা নয়,/ মেসি-এমি এসে/ আমায় নিয়ে উধাও হোলো/ সব-পেয়েছির দেশে।’
অথচ তিন দশক আগেও আর্জেন্টিনাকে ‘আর জেতে না’র কী অপবাদটাই না সহ্য করতে হয়েছে! ডিয়েগো ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পর আরও দুটি (১৯৯০ ও ২০১৪) টুর্নামেন্টর ফাইনাল খেলেও শিরোপা শূন্য থাকা বা ১৯৯৩ কোপার পর মহাদেশীয় মুকুট পরতে না পারার দুঃখ কী চমৎকার ভাবেই না ঘুচিয়ে দিলেন মেসি-বাহিনী! বিশ্বকাপ জেতার পর বুয়েনেস এইরেস উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। এবার কোপা জেতার পর কি আরেকটি উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইনরা?