অনলাইন ডেস্ক
ইন্টারনেটে অনুসন্ধানের জন্য গুগল লেন্সে যুক্ত হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক নতুন ‘ভিডিও সার্চ’ ফিচার। তাই গুগল লেন্স ব্যবহার করে নির্দিষ্ট বস্তু বা স্থানের ভিডিও ধারণ করে অনলাইন থেকে সে বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীরা সামনে কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে সে সম্পর্কে তথ্য জানতে দ্রুত ভিডিও ধারণ করে গুগলের এআইকে প্রশ্ন করতে পারবে।
বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনে ফিচারটি চালু করা হয়েছে। তবে ফিচারটি ব্যবহারের জন্য গুগল অ্যাপের ‘এআই ওভারভিউস’ সক্রিয় করতে হবে। তবে বর্তমানে শুধু ইংরেজি ভাষা সমর্থন করবে ফিচারটি।
গুগলের সার্চ বিভাগের প্রধান লিজ রিড বলেন, ব্যবহারকারীদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে আরও সহজে প্রশ্ন করার সুযোগ দেবে নতুন এই ফিচার।
তিনি ফিচারটি ব্যাখ্যা করতে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। যেমন: কোনো এক ব্যক্তি অ্যাকোরিয়ামে থাকা কিছু মাছ একসঙ্গে সাঁতরে যাচ্ছে কেন জানতে আগ্রহী হলে এখন তাকে মাছ সম্পর্কে অনলাইনে সার্চ করে প্রশ্ন লিখতে হবে না। নতুন ফিচারটি তাঁকে গুগল লেন্সের ক্যামেরা ধরে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করতে দেবে এবং তখন ব্যবহারকারী দেখতে থাকা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন। গুগল লেন্স এআই মডেল জেমিনি ব্যবহার করে উত্তর দেবে এবং প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে সার্চ ফলাফল প্রদান করবে।
প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষক পাওলো পেসকাতোর মতে, এটি গুগলের জন্য একটি ‘বড় বিষয়’।
চলতি বছর কিছু নির্দিষ্ট অনুসন্ধানের ওপরে এআই দিয়ে তৈরি ফলাফল চালু করেছিল গুগল। তবে এই ফিচারের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গত মে মাসে ফিচারটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। কারণ এটি ভুল তথ্য প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল ‘পিজ্জায় চিজ আটকাতে আঠা ব্যবহার করার’ মতো বিপজ্জনক পরামর্শ।
সে সময় গুগলের এক মুখপাত্র বলেন, এই সমস্যা ছিল ‘একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ’। পরবর্তীতে, এআইভিত্তিক ফলাফল উন্নত হয়েছে এবং ভুলের সংখ্যা কমে গেছে।
এরপর থেকে সার্চে এআই অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে গুগলে, যার মধ্যে ছিল গুগল লেন্স ব্যবহার করে স্থির ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করার ফিচার।
গুগল জানিয়েছে, ফিচারটি মোবাইল অ্যাপে গুগল লেন্সের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের ফিচারটি আরও বিস্তৃত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।
ভিডিও দিয়ে সার্চ করার নতুন উপায় চালু করার পাশাপাশি আরও কিছু নতুন আপডেটও নিয়ে এসেছে গুগল। কোম্পানিটি বলছে, তারা তাদের শপিং ফলাফল উন্নত করেছে, এখন বিভিন্ন বিক্রেতার রিভিউ এবং মূল্যের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত হতে থাকবে।
এ ছাড়া শাজাম নামের অ্যাপটির একটি প্রতিদ্বন্দ্বী ফিচার চালু করেছে গুগল। অ্যাপটি অ্যাপলের মালিকানাধীন। এই প্রতিদ্বন্দ্বী টুলটি ‘সার্কেল টু সার্চ’ ফিচারের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে। এর মাধ্যমে কোনো গান সহজেই খুঁজে বের করা যাবে।
সার্চ খাতে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ার সময় গুগল নতুন ফিচারটি চালু করেছে। এর মধ্যে ওপেনএআই জুলাই মাসে ঘোষণা দেয়, চ্যাটজিপিটি একটি সার্চ ফিচার ‘সার্চ জিপিটি’ নিয়ে আসছে। এটি ব্যবহারকারীদের চ্যাটবটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রশ্ন করে সার্চ করার সুযোগ দিচ্ছে এবং এটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সীমিতসংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৬৬০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে, যা কোম্পানির বাজারমূল্য ১৫৭ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
গুগলের নতুন ঘোষণাগুলো সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো থেকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য। তবে কোনো কোম্পানিই এখন পর্যন্ত গুগলের বিশাল প্রভাবকে সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি ও জেড নেট