মুহম্মদ মজিবুর রহমান
মনে রাখাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়
কিন্তু ভুলে যাওয়াটা
স্বল্প বিরতি
কারণ, যখন তুমি ভুলে যাও
তখন তুমি মনে রাখো
কিন্তু কিছু একটা
খুব স্বল্প বিরতি
এবং কিছু একটা অবশ্যই সব সময়ই
সেরা
খুব স্বল্প বিরতি
হ্যাঁ
হ্যাঁ, কারণ
থেমে যায়
এবং হয়তোবা এটা নেহাত
হ্যাঁ গুরুত্বপূর্ণ
দেখাকে এড়িয়ে যাওয়া
যেন এটাকে দেখা হয়েছে
এবং অবশ্যই এটা
হ্যাঁ
হ্যাঁ সেটা গুরুত্বপূর্ণের মতোই
না দেখে থাকা
দেখার মতোই
একদম না-জানার মতোই গুরুত্বপূর্ণ
যেমন জানাটাও
স্বল্প বিরতি
কারণ, একটা জিনিস হলো
তার নিজের পন্থায়
একদম সত্যের মতো
আরেকটার মতোই
খুব স্বল্প বিরতি
আর আমি
হ্যাঁ
আচ্ছা
আচ্ছা, আমি মনে করি আমাকে দেখা হোক
কিন্তু হ্যাঁ এবং আমাকে দেখা হোক এটাও চাই না
খুব স্বল্প বিরতি
কিন্তু হ্যাঁ
হ্যাঁ
ওরা বলে ওরা চায় ওদের দেখা হোক
কিংবা তেমন আচরণ ওরা করে
হ্যাঁ
সামান্য বিরতি
হ্যাঁ সেই তরুণ মেয়েগুলো
ভেঙে পড়ে
হ্যাঁ আচ্ছা
আমার মনে হয় ওরা চায়
কিন্তু সত্য নয় এটা সত্য নয়
স্বল্প বিরতি
আচ্ছা
খুব স্বল্প বিরতি
আমার ক্ষেত্রে নয়
যা হোক
দেখা
হ্যাঁ
হ্যাঁ
আমি মনে করি, আমি চাই আমাকে দেখুক
তবে বুঝুক
প্রশ্ন নিয়ে
আমি কি বোধগম্য হতে চাই
না, একেবারে তা নয়
যা বোঝা হয়ে যায়
তার আর অস্তিত্ব থাকে না
কেবল যা বোঝা হয়ে গেছে, তার মতো
বিরতি
কারণ, এটা হলো আসলে অজ্ঞাতে বাঁচার মতো
স্বল্প বিরতি
ওরা আসল কথাটাই ধরতে পারেনি
ওরা বিশ্বাস করে
যদি এটা বলা হয় বা উচ্চারিত হয় বা দেখানো হয়
তাহলে সেটা কিছু একটায় রূপান্তরিত হয়
যা ভালো
কারও জন্য
অন্যদের জন্য
সেটা এভাবেই
স্বল্প বিরতি
প্রশ্নবিদ্ধ
তারা
কিন্তু তারা কারা
তারা কারা, যাদের কথা আমি বলছি
তারা
বিরতি
মৃদু হাসি
কী নির্বোধ তারা
স্বল্প বিরতি
কারণ, এটা কি সব বিষয়ে
এই অজ্ঞাতভাবে বেঁচে থাকা
স্বল্প বিরতি
কী নির্বোধ তারা
আর কী নির্বোধ আমি
বিরতি
কিন্তু
হ্যাঁ
হ্যাঁ, কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই
আমি যতটা ভালো সম্ভব চেষ্টা করি
অজ্ঞাতভাবে বেঁচে থাকতে
স্বল্প বিরতি
কিন্তু আমি কি ভুলতে পারি
সব কি আমি মনে রাখতে পারি
সবকিছু
আমি
ভেঙে পড়ে।
বিরতি
কারণ, আত্মাকে কখনো দেখা যায় না
সে নিজেকে দেখতে দেবে না
স্বল্প বিরতি
এটা এমনই
বিরতি
তাই সব মানুষকে
তাদের জীবনযাপন করতে দাও
অজ্ঞাতে
তাদের বাঁচতে দাও অগোচরে গোপনে
বিরতি
আমাকে বাঁচতে দাও অজ্ঞাতে
বিরতি
হ্যাঁ
অনুবাদকের টীকা: ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী ইয়ন ফসেকে ‘নতুন ইবসেন’ বলে ডাকা হয়। মূলত নাট্যকার হলেও তিনি সাহিত্যে বহুপ্রজ। তাঁর উপন্যাস, কবিতাও বহু ভাষায় অনূদিত, আলোচিত। ইয়ন ফসে নাটকের ক্ষেত্রে একদম মিনিমালিস্ট। মানে, তিনি নাটকের মেদ, চর্বি সব ঝেড়ে ফেলেছেন। বক্তব্যে, বিষয়ে তিনি ইবসেনের নিকটবর্তী হলেও আঙ্গিকে স্যামুয়েল বেকেটের কাছে ঋণী। তবে বেকেটের মতো বিশুদ্ধ অ্যাবসার্ড তিনি নন। তাঁর নাটকে একটা গল্পের ইশারাও থাকে। এখানে যে নাটিকাটি আপনারা পড়লেন, সেটি এক চরিত্রের। সাধারণ নাটকে বিরতি, হাসি, কান্না ইত্যাদি ব্র্যাকেটে উল্লেখ করা হয়। ফসে সেসবের ধার ধারেননি। সংলাপ আর বিরতি এখানে একাকার। নির্দেশক আর পাঠক যার যার মতো অনুধাবন করে নেবেন ফসের নাটক। এটাও নয়া নাট্যরীতির একটা ধরন। আজকের এই পৃথিবীতে সবাই মনোযোগ চায়, সবাই কিছু একটা হতে চায়, কিন্তু ফসের এই নাটকের নাম না জানা চরিত্র আড়ালে থাকতে চান, অজ্ঞাতে একটা সাধারণ জীবনযাপন করতে চান। এমনকি চরিত্রের নামটিও নাটকে নেই, তার একক কথোপকথন কবিতার মতোই।