সানজিদা সামরিন
এক জেব্রা ছিল, নাম তেলনিয়াশকা। জেব্রা তো জেব্রার মতোই হবে। সারাটা দিন কেবল কাঁদত আর কাঁদত। সকাল, বিকেল, রাত শুধু কেঁদেই যেত সে। খাওয়ার আগে, খাওয়ার পরে, দাঁত মাজার সময় এমনকি ঘুমের ভেতরও কাঁদত সে। তাঁর কান্নার শব্দ শুনে মাঝে মাঝে প্রতিবেশী পশুপাখিরা জানালায় এসে বলত, ‘তুমি যদি এভাবে কান্না করতে থাকো, তাহলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে তাই না!’ তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। শুধু কি তাই? ডাক্তার বহুবার ওকে হাসির আর রসিকতার ওষুধ লিখে দিয়েছে প্রেসক্রিপশনে। সে কথা নাহয় বাদই দাও, আনন্দ মেশানো ইনজেকশন পুশ করেও কাঁদুনে জেব্রার কান্না বন্ধ হয়নি।
যতই তাকে কাঁদতে নিষেধ করা হয় বা সান্ত্বনা দেওয়া হয়, ততই সে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। সারা দিনে চোখের জল মুছতে ওর দশ-দশটা রুমাল লেগে যেত। উঠোনে দড়ি টানিয়ে সেগুলো সে আবার শুকাতে দিত। যা-ই হোক, এত দিনে চেষ্টা করেও কেউ জেব্রার কান্না থামাতে পারেনি।
একবার কী হলো জানো? লুজ নামের এক বাচ্চা হাতি গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বহু কষ্টে বাড়ি খুঁজে খুঁজে এল তেলনিয়াশকার বাড়ি। তেলনিয়াশকা, মানে জেব্রা ওকে দেখে খুবই অবাক হলো। এমনকি এক মিনিটের জন্য ওর কান্না থেমেও গেল। বলল, ‘তুমি কে?’
বাচ্চা হাতি বলল, ‘আমার নাম লুজ। কী হয়েছে, তুমি কাঁদছ না কেন? ক্লান্ত লাগছে কাঁদতে? দয়া করে কাঁদো আগের মতো।’
জেব্রা উঁচু স্বরে বলল, ‘কাঁদতে কখনোই আমার ক্লান্ত লাগে না। কিন্তু সেটা বিষয় না, তুমি এখানে কেন এসেছ?’
‘আমি তোমার কান্নার একটা ছবি তুলতে এসেছি। একটু কাঁদবে আগের মতো?’ বলল বাচ্চা হাতি।
‘আমার কোনো ছবির দরকার নেই!’ রেগে বলল জেব্রা।
‘তা হয়তো তোমার দরকার নেই। কিন্তু বিশ্ব রেকর্ড বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনে আমি তোমার কান্নার ছবি ছাপতে চাই।’ জানাল বাচ্চা হাতি।
‘বিশ্ব রেকর্ড? মানে বুঝলাম না!’ অবাক হয়ে বলল জেব্রা।
‘মানে পৃথিবীতে তোমার মতো কান্না আর কে করে? তুমি কান্নায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছ!’ জানাল বাচ্চা হাতি লুজ।
‘আমি এ বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই না! একদম না!’ বলল জেব্রা।
কিন্তু বাচ্চা হাতি নাছোড়বান্দা। সে ক্যামেরা তাক করে বসেই রইল। বারবার অনুরোধ করতে লাগল, ‘দয়া করে একটু কাঁদো, চেষ্টা করলেই পারবে। তুমি জানো, তুমিই সেরা!’
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে জেব্রা বলল, ‘যতই চেষ্টা করো না কেন, আমি আর কাঁদব না।’
বেচারা হাতির বাচ্চাটা দাঁড়িয়ে থাকল তো থাকলই, কিন্তু সবশেষে ফিরে যেতে হলো তাকে জেব্রার কান্না ছাড়াই।
এত দিন ডাক্তাররা এত কিছু করেও জেব্রার কান্না বন্ধ করতে না পারলেও হাতির এই ক্যামেরাই কিন্তু জেব্রার কান্না থামিয়ে দিল। সেদিনের পর থেকে সে আর কাঁদল না। প্রতিবেশীরা হাতির ওই ক্যামেরার নাম দিল মেডিকেল ক্যামেরা।
মূল: মিখাইল প্লিয়াৎস্কোভস্কি