অমি বাবার সঙ্গে এসেছে চিড়িয়াখানায়। এই তার প্রথমবার চিড়িয়াখানায় আসা। ক্লাস টুতে উঠলে বাবা চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসবেন, এমনটাই বলেছিলেন—তাই আসা। প্রথমেই বানরের খাঁচার সামনে এসে দাঁড়াল তারা দুজন। বানরের কাণ্ডকারখানা দেখে অমি বেশ মজা পেল, হাসিও পেল। তার মনে হলো বানরগুলোর অনেক বুদ্ধি। সে বাবাকে বলল,
‘বাবা, বানরের অনেক বুদ্ধি, তাই না?’
‘হুম!’
‘আচ্ছা বাবা, বুদ্ধি আসলে কোথায় থাকে?’
‘মাথায়।’
‘সবার মাথায়?’
‘সবার মাথায়।’
‘আচ্ছা, কার বুদ্ধি বেশি?’
‘তুমি ভেবে বের করো।’
অমি বলল, ‘আমার মনে হয় জিরাফের।’ তারা দুজন তখন জিরাফের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে।
‘তোমার কেন মনে হলো জিরাফের বুদ্ধি বেশি?’
‘দেখে না ওর মাথাটা কত উঁচুতে।’
‘হা হা হা...! আরে বোকা, মাথা উঁচুতে থাকলেই কি বুদ্ধি বেশি হয়?’
‘তাহলে কার?’
‘তুমিই ভেবে বের করো।’
ওরা এবার হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়াল হাতির জায়গাটায়। এত বড় হাতিকে তো আর খাঁচায় রাখা যায় না। তিন-চারটা হাতি একটা বিশাল জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আস্ত কলাগাছ চিবিয়ে খাচ্ছিল। অমি চেঁচিয়ে উঠল,
‘সবচেয়ে বেশি বুদ্ধি তাহলে হাতির।’
‘তোমার কেন মনে হলো হাতির সবচেয়ে বেশি বুদ্ধি?’
‘দেখছ না, ওর মাথাটা কত বড়।’
‘হা হা হা!’— বাবা এবারও হেসে ফেললেন। বললেন, ‘আরে বোকা, মাথা বড় হলেই বুঝি বুদ্ধি বেশি হবে?’
‘তাহলে কার বুদ্ধি বেশি?’—অমিকে চিন্তিত মনে হয়।
‘এই যে আমরা সুন্দর একটা চিড়িয়াখানায় এলাম। এখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রাণী আর পাখিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সময় কাটাচ্ছি। ওদের দেখছি। ওরাও আমাদের দেখছে। এই বুদ্ধিটা কার?’
‘কার?’
‘আহা! ভেবে বলো।’
‘মানুষের।’
‘গুড। তাহলে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধি কার?’
‘মানুষের।’—চেঁচিয়ে উঠল অমি।
ফেরার পথে অমির বেশ গর্ব হলো। তার বুদ্ধিই সবচেয়ে বেশি। কারণ সে-ও একজন মানুষ যে।