বাড়ি থেকে বের হয়ে চোখ পড়ল নরসিংদীর রায়পুরার মির্জাপুর ইউনিয়নের নীলকুঠি এলাকার আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাহমুদাবাদ রাজিউদ্দিন আহাম্মদ রাজু উচ্চবিদ্যালয়ের গেটে। বেলা তখন ১১ টা। স্কুলের মূল গেটে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আনাগোনা। স্কুল খোলার খবরে খুবই উচ্ছ্বসিত তারা। একটু সামনে এগিয়ে দেখা মেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জটলা। একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। জড়িয়ে ধরছে আনন্দে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় শিক্ষার্থীর দল। অনেকে মেতে উঠেছে গল্প-আড্ডায়। তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝলকানি।
করোনা মহামারি শুরুর পর স্বাস্থ্য সতর্কতার অংশ হিসেবে গত বছরের মার্চে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে শুধু অপেক্ষা। ধাপে ধাপে এই ছুটি কেবল বেড়েছে। আর দীর্ঘ হয়েছে অপেক্ষার পালা। ঘরবন্দী শিশু-কিশোরদের নাভিশ্বাস উঠেছে বললেও কম বলা হবে। এখন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে। দীর্ঘ অদেখা শেষে বন্ধুদের সান্নিধ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তাদের মুখরিত করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, স্কুল খোলার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ছুটে আসে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এ সময় তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। স্কুল এখনো খোলেনি। তবু অনেকে বই খাতাও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার খবরটি শিক্ষকদের মুখ থেকে শুনতেই তাদের এ আগমন। অনেকে আবার স্কুল মাঠে খেলাধুলায় মেতেছে। দুপুর পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল প্রাঙ্গণেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
আরেক শিক্ষার্থী তাসফিয়া তারান্নুম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে। বলল, ‘বাবার মুখে শুনতে পেলাম ১২ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হবে। শোনামাত্র খুবই আনন্দ পেয়েছি, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ভর্তির পর থেকে কোনো ক্লাস হয়নি। মাঝেমধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে স্কুলে আসা হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক বললেন, স্কুল খোলার খবরে ছেলেমেয়েদের আনন্দিত দেখেছি। মেয়ে বলল—স্কুলে বকেয়া টাকার জন্য বিদ্যালয় থেকে চাপ দিচ্ছে। দীর্ঘদিন করোনার কারণে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছি। এর মধ্যে আমাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া মোটেই কাম্য নয়।
এই উচ্ছ্বাস থেকে বাদ যাননি শিক্ষকেরাও। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের দেখে তাঁরাও আনন্দিত। মাহমুদাবাদ রাজিউদ্দিন আহাম্মদ রাজু উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘স্কুল খোলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বন্ধের সময়গুলোতে সহকর্মী শিক্ষার্থীসহ সবাইকে মিস করতাম। স্কুল খোলার সংবাদে সকলের মাঝে প্রাণ ফিরে এসেছে।’