রাজধানীর বনশ্রীতে আলিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস উল্টে খালে (নড়াই নদী) পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা জানান, তর্কাতর্কির পর কয়েকজন যাত্রী চালককে মারধর করেন। পরে চালক ইচ্ছা করেই বাসটি খালের দিকে নামিয়ে দেন।
বাসটি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস ও রামপুরা থানা-পুলিশ কাজ করছে। বাসটি স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ রুটে চলাচল করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলিফ পরিবহনের বাসটি বনশ্রীর জি-ব্লক মেরাদিয়া বাজারে নড়াই নদীতে উল্টে পড়ে আছে। নড়াই এক সময় নদী থাকলেও এখন এটিকে মেরাদিয়া খাল বলেন স্থানীয়রা। বাসটির সামনের অংশ পানির ভেতরে, পেছনের অংশ তীরে রয়েছে। উল্টে থাকা বাসের ভেতরে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে ভেতরে তাঁরা কাউকে পাননি। বাসটিকে উদ্ধার করতে রামপুরা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে একটি রেকার নিয়ে এসেছে।
বাসে থাকা এক যাত্রী বলেন, ‘চার নারী ও দুই পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে প্রথমে বাসের কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। কন্ট্রাক্টরের চাওয়া অনুযায়ী ১৫ টাকা করে তাঁরা ভাড়াও দেন। তবে ওই যাত্রীদের যেখানে নামানোর কথা ছিল, সেখানে নামানো হয়নি। গাড়িটি রানিংয়ের ওপর ছিল। এক নারী নামার সময় পা পিছলে পড়ে যান। পরে দুই পুরুষ যাত্রী চালকের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়ান। তাঁরা চালকের কলার ধরে মারধর করেন। আমরা মারধর করতে নিষেধ করি। তবে তাঁরা থামছিলেন না। তাঁদের প্রশাসনের লোক মনে হয়েছিল। পরে বাসটি বনশ্রীতে ফেমাস হসপিটালে সামনে এসে থামে। তখনও যাত্রীরা চালককে মারধর করছিলেন। চালক মারধর থেকে বাঁচতে বাসটি নদীর দিকে নিয়ে যান। এরপর চালক গ্লাস ভেঙে বের হয়ে যান। কিছু যাত্রী নদীতে পড়ার আগেই লাফিয়ে বের হন। তবে কিছু যাত্রী নদীতে পড়ে যান, তাঁরাও পরবর্তীতে বের হন। আমি গাড়ি চালকের পেছনেই বসা ছিলাম। ভেতরে কেউ আটকা নেই বলে আমার মনে হচ্ছে। গাড়িতে ৩০-৩৫ জন যাত্রী ছিল।’
প্রত্যক্ষদর্শী জেহাদ নামে এক তরুণ বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আলিফ পরিবহনের বাসটি উল্টে নদীতে পড়ে। এর আগে মেরাদিয়ার বাগান বাড়ি স্ট্যান্ডে এক নারীকে নামানোর সময় ওই নারী যাত্রী পড়ে যান। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই পুরুষ যাত্রী চালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান। চালক গাড়িটি চালিয়ে বনশ্রীর জি ব্লক পর্যন্ত চলে আসেন। তখন ওই দুই যাত্রী তাঁকে মারধর করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি খালের ভেতরে পড়ে যায়।’
ইব্রাহিম নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাসের ভেতর নারী ও শিশুও ছিল। ঘটনার পর থেকে গাড়ির চালক এবং হেলপার পলাতক রয়েছেন।
রামপুরা থানার এসআই গোলাপ মাহমুদ বলেন, ‘ডেমরার মস্ত মাঝি এলাকা থেকে চারজন নারী ও দুজন পুরুষ যাত্রী বাসটিতে ওঠেন। তাঁদের মেরাদিয়া বাগান বাড়ি এলাকায় নামার কথা ছিল। তাঁদের ঠিকমতো নামিয়ে দেননি গাড়ি চালক। একজন নারী বাস থেকে নামার সময় পড়ে যান। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা দুই পুরুষ যাত্রী গাড়ি চালককে গাড়িটি থামিয়ে ভালো করে নামানোর অনুরোধ জানান। তবে গাড়িচালক তাঁদের অনুরোধ না শুনে চালাতে থাকেন। এরপর ওই দুই পুরুষ যাত্রী গাড়ি চালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান। চালককে মারধর করেন। একপর্যায়ে গাড়িটি উল্টে খালে পড়ে যায়। এতে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে কেউ বাসের ভেতরে আটকা পড়েছেন এমন খবর এখনো পাইনি। যারা বাসের ভেতর ছিলেন, তাঁরা সাঁতরে উঠেছেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে কারও আঘাত গুরুতর নয়।
তিনি বলেন, ‘বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়েছিল নাকি চালক ইচ্ছে করে খালের ভেতরে ফেলেছেন, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। কারণ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেছেন, চালক ইচ্ছা করে বাসটি খালের দিকে নামিয়ে দেন।’