মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর জমিতে পানি প্রবেশ বন্ধ এবং শ্রমিকদের চলাচলের সুবিধার জন্য পাশের ইছামতী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে আশপাশের কৃষিজমিতে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার বাসাইল ইউনিয়নের উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খিদিরপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ফসলি জমিতে দুটি খননযন্ত্র বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে আশপাশের বেশ কয়েকটি জমি।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কৃষিকাজই তাঁদের প্রধান পেশা। এতেই তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু মাটিখেকো ইটভাটার মালিকেরা কৃষকদের রুটিরুজিতে আঘাত করছেন। তাঁরা যেভাবে কৃষিজমি নষ্ট করছেন, তাতে কিছুদিন পর আর জমি খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রশাসন যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বেপারী বলেন, ‘খিদিরপুরের জহিরুল হক জহির কৃষক আব্দুর রহমানের জমির পাশে মাটি কাটছে। সে কারণে আব্দুর রহমানের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাঁর জমি ভেঙে গেলেই আমার ১৪০ শতাংশ জমিতে ভাঙন ধরবে। এ ছাড়া ইছামতীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানোর কারণে আমাদের জমিগুলোতে পানি দিতে পারছি না। আমার মতো শতাধিক কৃষক পানি দিতে পারছেন না। এতে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এখন ধানগাছগুলো রোদে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তাই এখনই প্রশাসনের কাছে মাটি কাটা বন্ধ এবং বাঁধ খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
খিদিরপুর গ্রামের কৃষক মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনি প্রায় দুই একর জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন; যাতে নদীর পানি দিতে হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ইছামতীতে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে ফেলেছে। এতে জমিগুলোতে সেচকাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
খিদিরপুরের বাসিন্দা মো. আহসানুল বলেন, ‘আমার ফুফাতো ভাই বাক্-শ্রবণপ্রতিবন্ধী মো. সামাদের সাড়ে ১০ শতাংশ জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়েছে জহির। এই জমির ওপরই সামাদের সংসার চলত। মাটি কাটার ফলে সামাদ একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।’
আমি দ্রুত ইছামতী নদীর ওই বাঁধ খুলে দেব এবং যাঁরা ফসলি জমির মাটি কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’ শাহিনা আক্তার ইউএনও, সিরাজদিখান
জানতে চাইলে জহির বলেন, ‘আমি কোনো নদীতে বাঁধ দিইনি। এবার কোনো মাটি কেটে ইটভাটায় আনছি না। এবার শুধু আমার ইটভাটা নিয়ে বসে আছি।’ এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, ‘উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামের কবরস্থানসংলগ্ন এলাকায় ইছামতী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি কৃষকেরা আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা দ্রুত বাঁধ খুলে দেবে বলে জানিয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ এবং কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি গত সোমবার রাতে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। স্থানীয় নায়েবকে বলেছি, তাঁরা যেন সরেজমিনে দেখে আমাকে জানান। আমি দ্রুত ওই বাঁধ খুলে দেব এবং যাঁরা ফসলি জমির মাটি কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’