জয়পুরহাট থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৯ বছর পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে স্ত্রী আফরোজা বেগমকে (৫৫) খুঁজে পেলেন স্বামী লুৎফর রহমান। আজ সোমবার সকালে মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হকের সহযোগিতায় স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। লুৎফর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কলিন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে লুৎফর রহমান বলেন, সন্তান হওয়ার ২৫ বছর পর হঠাৎ আমার স্ত্রীর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অতিরিক্ত কথা বলা, এলোমেলো কাজকর্ম করাসহ অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। আর্থিক অনটনের পরও নিজের ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় কবিরাজি ও ডাক্তারি চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তাতেও ভালো হয়নি। গত ৯ বছর আগে একদিন কাজের সন্ধানে আমি বাড়ি থেকে অন্য জেলায় আসলে আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা ছিল হয়তো মারা গেছে। কিন্তু গতকাল রোববার আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার জানান আমার স্ত্রীকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় পাওয়া গেছে বলে পাঁচবিবি থানা থেকে জানানো হয়েছে। পরে পাঁচবিবি থানায় গেলে মোবাইলে ভিডিও কল দেখালে নিশ্চিত হই যে ওই নারীই আমার স্ত্রী। পরে মেয়ে জামাই মানিক মিয়া ও শ্যালকের বউ ফরিদা বেগম সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে নিতে মির্জাপুর আসি।
'মানবতায় আমরা' সংগঠনের সদস্য সুকান্ত সরকার বলেন, গতকাল সকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সময় মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বৃদ্ধা মহিলাকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে তাঁর ছবি তোলে ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমানের নজরে আসে। তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার খাইরুল ইসলামকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা অসুস্থ মহিলার গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য থানা নিয়ে আসতে বলেন।
মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ রিজাউল হক বলেন, স্থানীয় সামাজিক সংগঠন 'মানবতায় আমরা' কয়েকজন সদস্য গতকাল সকালে অসুস্থ অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে থানায় নিয়ে আসেন। পরে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানতে চাইলে সে জানায় তাঁর বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায়। পরে পাঁচবিবি থানায় আফরোজা বেগমের নাম ঠিকানা ও ছবি পাঠানো হলে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিকানা নিশ্চিত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই বৃদ্ধাকে তাঁর স্বামী লুৎফর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃদ্ধাকে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান ও সামাজিক সংগঠন 'মানবতায় আমরা' সংগঠনের সদস্যরা।