চলছে শ্রাবণ মাস। ভরা বর্ষায় কয়েক দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। খাল-বিল ও জলাশয় পানিতে পরিপূর্ণ। বর্ষার নতুন পানি পেয়ে মাছের ঝাঁকের বিচরণ শুরু হয়েছে। আর তাইতো জেলে ও শৌখিন মানুষদের পাল্লা দিয়ে চলছে মাছ শিকার।
গাজীপুর-কালীগঞ্জের খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে গেলে দেখা মিলছে মাছ শিকারিদের এ উৎসব। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, বেল, পেতে রাখা জাল, চাঁই, বড়শিসহ আরও নাম না জানা অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। এই মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমূল্যে। রাজধানী শহর থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরাই মাছের বড় ক্রেতা।
উপজেলার বেরুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা হয় মো. ওয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বর্ষার পানিতে বড়শিতে মাছ ধরতে এসেছেন পাশের গ্রাম পূবাইল থেকে। তাঁর শখ মাছ শিকার। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বড়শিতে মাছ শিকার করেন।
ওয়াজ উদ্দিন বলেন, বড়শিতে মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু খাবার। যে খাবারের লোভে মাছেরা বড়শির কাছে আসে খাবারের আশায়। প্রতিদিনই তিনি এক-দুটি করে বড় মাছ শিকার করেন। তবে এতে কষ্টও হয় অনেক।
বড়শিতে মাছ ধরার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য ধরতে শেখা। সারা দিন চলে যাবে মাছ আসবে না, কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ বেলায় এসে ধরা দেবে বড় আকারের মাছ। জানান ওয়াজ উদ্দিন।
মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘মাছ মাইরাই সংসার চালাই। বাইরা মাস (বর্ষাকাল) আইলে বিলে যখন পানি আসে, তখন ডুলা বইরা মাছ দইরা বাজারে নিয়া বেচি। যে কয় টেহা পাই হেইডা দিয়া সংসার চালাই। বাছরের বাকি দিনগুলা মাইনষের বাড়ি জোগাল দিই। হারা বছর এই সময়ডার লাইগাই অপেক্ষা করি।’
জেলে মো. ইলিয়াছুর রহমান জানান, বিল বেলাইয়ে তাঁর দুটি মাঝারি আকারের ডোবা রয়েছে। যেখান থেকে তিনি শুকনো মৌসুমে দেশি মাছ সংগ্রহ করেন আর বকি সময় বড়শি ও বেল জালের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে আধিক্য বেড়ে যায়, ফলে মাছ শিকারই হয়ে পড়ে প্রধান কাজ।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘জলাধার প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার। এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। সুতরাং প্রকৃতিকে রক্ষা করে এর থেকে সর্বোচ্চ সম্পদ আহরণই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’