দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া আর রাতে অনুভূত হচ্ছে শীত। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়রিয়া, পেটব্যথা, জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদ আর গরম আবহাওয়া থাকছে। অন্যদিকে শীত বিদায় নিলেও রাতে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে জনবলের সংকট ও রোগীর বাড়তি চাপের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা শ্যামলী রানী বলেন, ‘দিনের বেলা গরমে ফ্যান চালাতে হচ্ছে আর রাতের বেলা কম্বল-কাঁথা গায়ে দিতে হচ্ছে। এই আবহাওয়ার কারণে আমার মেয়ে কদিন ধরে জ্বরে ভুগছে।’
রোকেয়া বেগম নামের এক রোগী বলেন, ‘পেটব্যথার সঙ্গে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। নিজ গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে স্যালাইন ও ট্যাবলেট কিনে খাওয়ার পরও কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে এসেছি।’
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোট মঞ্জুর করা পদের সংখ্য ১৮২। এর মধ্যে কর্মরত ১১৭ জন। ৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক ২৭ জনের মধ্যে কর্মরত ৯ জন। ১৮টি পদ শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা (সব) ৬৯ জনের স্থলে রয়েছেন ৩৬ জন, বাকি ৩৩টি পদ শূন্য। সিএসসিপি (তৃতীয় শ্রেণি) ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ২৪ জন। ২টি পদ শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ২১ জনের স্থলে রয়েছেন ১১ জন। ১০টি পদ শূন্য। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির এমএসসি হোমিওপ্যাথি ১ জন কর্মরত। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা (নার্স মিডওয়াইফ) ৩৭ জন রয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিউট্রিশনিস্ট ১ জন। এই জনবল দিয়েই চলছে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা।
সূত্রটি আরও জানায়, গত ১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার ৪১৪ জন, জরুরি বিভাগে ২ হাজার ৪৮৩ এবং আন্তবিভাগে ১ হাজার ৭১৭ জন। গত রোববার বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৫৩, জরুরি বিভাগে ১১৯ এবং আন্তবিভাগে ৬৪ জন। এতে করে গড়ে বহির্বিভাগে ৫০০, জরুরি বিভাগে ১৫০-২০০ ও আন্তবিভাগে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলার ওপর দিয়ে বহমান মৃদু তাপ প্রবাহটি অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।