ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি (সহ-সভাপতি) শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে ৫ দফা দাবিতে শাহবাগে গত ৬ দিন যাবত লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন। এই ৬ দিনে সরকারের দায়িত্বশীল কেউ খোঁজ না নেওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি।
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গত শনিবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টা থেকে তিনি এ অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন।
শামছুন নাহার হলের এ ভিপির পাঁচ দফা দাবির প্রথম দফা হলো— ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা এবং দ্রুত রায় কার্যকর করা। দ্বিতীয় দফা হলো–প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একটি ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করা। একইসাথে খানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত সহায়তা ও মানসিক সমর্থন সেবা দেওয়া হবে। এ দফাটি কার্যকর করতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তিনি।
দাবির তৃতীয় দফাটি হলো–নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-১৪ সংশোধনপূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও যুক্ত করা। চতুর্থ দফা হলো ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক,শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নেওয়া।
পঞ্চম দফা হলো–নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণী-স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একইসাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
৫ দফা দাবিতে তাসনিম আফরোজ ইমির এ ৬ দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর,গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেষ্ঠ্য যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন তাদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ বেশকিছু সংগঠন সাংগঠনিকভাবে এসে সংহতি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে তাসনিম আফরোজ ইমির সাথে কথা বললে তিনি জানান, সারাদেশে চলমান অস্থিরতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে এ ৫ দফা দাবিতে শাহবাগে অবস্থান করছেন তিনি। তাকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিচ্ছেন তার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী।
এখন পর্যন্ত সরকারে দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ খোঁজ নেয়নি দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ’সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে কেউই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি এবং আশা জাগানিয়া কোনো উদ্যোগও নেননি। লাগাতার প্রতিকূল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করার বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর দেখা দিয়েছে। সরকার এভাবে দিনের পর দিন নাগরিকদের সাথে এ রকম অবহেলামূলক আচরণ করতে পারে না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা আমাদের সুস্পষ্ট ৫টি দফা পেশ করেছি।
৫ দফার দ্বিতীয় দফা–ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করার জন্য তিনি গত সোমবার রাতে ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটাম দেন। এ ৭২ ঘন্টায় কারো কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আল্টিমেটাম শেষ হলে আজ রাতেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান তিনি।