শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদীতে জিও ব্যাগবোঝাই বাল্কহেডডুবির ৪০ ঘণ্টা পর নিখোঁজ দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে পিরোজপুরের অনুসন্ধান অক্সিজেন বোর্ড নামের একটি বেসরকারি ডুবুরি দল তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
উদ্ধার অভিযান চালানো ডুবুরি দলের দাবি, তারা পদ্মার ১৩০ ফুট পানির নিচে বাল্কহেডটির সন্ধান পায়। পরে তল্লাশি চালিয়ে নৌযানটির ভেতরে আটকা পড়া ওই দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে।
মারা যাওয়া দুই শ্রমিক হলেন নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের খালাসিকান্দী গ্রামের বারেক সরদারের ছেলে আল আমীন সরদার (৩৭) ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধ্য বুনিয়া এলাকার মোস্তফা কেরুর ছেলে আরিফ মিয়া (২৬)।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে সন্ধ্যার দিকে দুই শ্রমিকের লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফৎগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন ঘাটে নোঙর করা অবস্থায় বাল্কহেডটি দড়ি ছিঁড়ে ডুবে যায়। ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ওই দুই শ্রমিকও নৌযানটির সঙ্গে ডুবে যান।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ বাজারসংলগ্ন পদ্মা নদীর তীররক্ষা বাঁধে মহসিন এক্সপ্রেস নামের ডুবে যাওয়া ওই বাল্কহেড দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলছিল। মঙ্গলবার রাতে পদ্মা নদীর পাড়ে বাল্কহেডটি নোঙর করা ছিল। এর সামনের অংশের জিও ব্যাগ নামানো হলেও পেছনের দিকে বোঝাই ছিল। এতে পেছনের দিকে অতিরিক্ত চাপ থাকায় বাল্কহেডটির রশি ছিঁড়ে তলিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালান। তবে শরীয়তপুরে ডুবুরি দল না থাকায় ভোরের দিকে মাদারীপুর থেকে একটি ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল সরকারিভাবে দুই দিনে ১৮ ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের সন্ধান পেলেও নিখোঁজ দুই শ্রমিকের সন্ধান পায়নি। পরে তারা তাদের উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। পরে নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবার ও প্রকল্পের ঠিকাদার মিলে নিজ খরচে পিরোজপুর থেকে ‘অনুসন্ধান অক্সিজেন বোর্ড’ নামের ডুবুরি দল এনে আজ বেলা ২টা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। এর ৩ ঘণ্টার মধ্যে ওই দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় তারা। তবে বাল্কহেডটি এখনো উদ্ধার হয়নি।
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দলনেতা (লিডার) লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালিয়েছিল। তবে সে সময় নদীর গভীরতা ও স্রোত বেশি থাকায় বাল্কহেডটির সন্ধান পাওয়া গেলেও নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান মেলেনি। পরে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
নড়িয়ার ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে আসা অনুসন্ধান অক্সিজেন বোর্ড নামের একটি বেসরকারি ডুবুরি দল ডুবে থাকা বাল্কহেড থেকে দুই শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী ওই দুই শ্রমিকের পরিবারকে সহায়তা করা হবে।’