ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা মাগুরার সেই শিশুটির গায়েবানা জানাজা আয়োজন করেছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। জানাজা শেষে এ প্লাটফর্মের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতীকী কফিন মিছিল করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানও অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ভিসি চত্বর থেকে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে সমাবেশ করেন এ শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে শিক্ষার্থীদেরকে ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার, বিচার চাই, হত্যার বিচার চাই; ২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাত দিন হাসপাতালের বেডে একা লড়েছে ধর্ষণের শিকার শিশুটি। তার মৃত্যুর পর এই যুদ্ধের ভার এরখন পুরো বাংলাদেশের ওপর। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ষণকে কেবল শ্লীলতাহানি নয়, হত্যা হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি আর কোনো শিশুর যেন অকালে প্রাণ না হারায়, সে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান তাঁরা।
এ সময় ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের অন্যতম সংগঠক উমামা ফাতেমা বলেন, ‘দেশে নারী নিরাপত্তার খুবই ভয়াবহ অবস্থায় আছে। কিন্তু যখনই এগুলো নিয়ে রাস্তায় নামি, আমাদের নানা ট্যাগ খেতে হয়। নারীরা তো এ দেশেরই জনগণ, তাহলে কেন এমন হয়?’
উমামা আরও বলেন, ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ কেবল মাগুরার শিশুটির ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা এরই মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনসহ ৫ দফা দাবিতে আইন এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে প্রতিদিন ধর্ষণের বিচারের জন্য নামতে হবে না। আমরা চাই, আমাদের এমন আইন এবং বিচার ব্যবস্থা থাকবে যা নিজেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
মানারাত ইন্টারনাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে হাস্পাতালে আমি ছিলাম। মৃত্যুর পর তার মায়ের বাঁধনহারা কান্না আমি দেখেছি। অথচ আমরা জাতি হিসেবে কত নির্লজ্জ! এখনো ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই না, আপনারা দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। ধর্ষককে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। এমন বিচার করব। আর কখনো কেউ ধর্ষণ করার সাহস পাবে না।’
শামছুন নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা আক্তার বলেন, ‘শিশুটির পরিবার সারাজীবন এ ক্ষত বয়ে বেড়াবে। মৃত্যুর মাধ্যমে তার লড়াইয়ের ভার আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। এতোটুকু একটা বাচ্চার কাঁতরানো রাষ্ট্র এতোদিন কেবল নীরবে দেখে গেছে। বিচার এখনো করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব, যতক্ষণ আইন ধর্ষকদের বিচার করতে পারে। আমরা ধর্ষকদের কেবল মৃত্যুদণ্ড দেখতে চাই।’