ঈদ মানেই খুশি, আনন্দ আর উদ্যাপন। তবে এই আনন্দ যদি শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে কি তা পূর্ণতা পায়? আজকের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার দিকেও। উপার্জিত অর্থ দিয়ে শুধু নিজের চাহিদা মেটানোই নয়, পরিবার ও সমাজের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা। কেউ পথশিশুদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করছে, কেউ পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে প্রথম উপার্জনের টাকা ব্যয় করছে, আবার কেউ মেহেদি উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঈদ রাঙিয়ে তুলছে। এমনই কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈদ শুধু নিজের জন্য নয়; বরং এটি অন্যদের মুখে হাসি ফোটানোর এক অনন্য উপলক্ষ। এই সুন্দর ও মানবিক গল্পগুলো শুনিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান।
পথশিশুদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি
আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে পথশিশুদের জন্য কাজ করি। আমাদের ক্যাম্পাসের পাশেই পথশিশুদের একটি স্কুল রয়েছে, যেখানে আমরা সারা বছর বিভিন্নভাবে সহায়তার চেষ্টা করি। এবার তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একসঙ্গে ইফতার করার পর তাদের নতুন পোশাক ও উপহার দেব, সঙ্গে থাকবে মেহেদি উৎসব। পথশিশুদের উচ্ছ্বাস আর হাসিমুখ দেখে ঈদের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায়। ঈদ শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করাতেই এর পূর্ণতা।
পরিবারের হাসিতে আমার ঈদ আনন্দ
ঈদ মানেই খুশি, আনন্দ। সেই আনন্দ আরও গভীর হয়, যখন নিজের উপার্জন পরিবারের সঙ্গে ভাগ করা যায়। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, বাবা নিজের জন্য কিছু না কিনলেও পরিবারের সবার জন্য উপহার আনতেন। এমনকি তাঁর উদারতা আত্মীয়দের দিকেও প্রসারিত হতো। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল, একদিন বাবার মতো আমিও পরিবারের জন্য কিছু করব। এবার স্কলারশিপের কিছু অর্থ হাতে এসেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরো টাকা পরিবারের জন্য ব্যয় করব, যেন তাদের মুখের হাসিতে আমার ঈদ আনন্দ পূর্ণ হয়।
ঈদ কাটাব পরিবারের সঙ্গে
তিন মাস পর বাড়ি ফিরছি, মনে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছে। মায়ের হাতের রান্না, ছোট ভাইয়ের হাজারো গল্প—সব যেন অপেক্ষা করে আছে। ঢাকার চেনা রাস্তাগুলোও নতুন লাগছে। ঈদের সকালটা আবার সেই পরিচিত ঘ্রাণ আর চেনা কোলাহলে ভরে উঠবে। এত দিন পর নিজের শহরে ফিরে, সত্যি বলতে মনে হচ্ছে, ঈদের আসল আনন্দ এখন শুরু হলো।
পরিশ্রমের উপার্জনে ঈদের আনন্দ
পড়ালেখার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করি এবং কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবেও ছোট পরিসরে কাজ করছি। আয় সীমিত হলেও মা-বাবাকে ঈদে কিছু উপহার দিতে পারার আনন্দই অন্য রকম। সাধ্যের মধ্যে ছোট উপহার হলেও পরিবারের মুখের হাসি আর তাদের সন্তুষ্টিই আমার ঈদের আসল পাওয়া। নিজের পরিশ্রমের টাকায় প্রিয়জনদের খুশি দেখার অনুভূতিটাই অনন্য। ঈদ মানেই খুশি ভাগাভাগি, আর আমার জন্য সেই খুশি পরিবারের সঙ্গে নিজের উপার্জন ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত।
মেহেদির রঙে ভালোবাসার স্পর্শ
এবার আমার ঈদ আনন্দের অন্যতম আকর্ষণ হবে মেহেদি উৎসব, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে তা উদ্যাপন করতে চাই। ছোটবেলা থেকে মেহেদির রঙে হাত রাঙানোর মাঝে এক অন্য রকম উচ্ছ্বাস খুঁজে পাই। এবার এই আনন্দটুকু কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই, যেন তারাও এই উৎসবের রঙিন আনন্দ অনুভব করতে পারে। তাই এই মেহেদি উৎসবের মধ্য দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই এবং তাদের অনুভব করাতে চাই যে তারা সত্যিই বিশেষ!
স্বাবলম্বিতার প্রথম ঈদ আনন্দ
স্বপ্ন ছিল, পরিবারের কাছ থেকে আর টাকা নেব না; নিজের উপার্জনে চলব। কিন্তু টিউশন পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তিন মাস চেষ্টা করে একদিন প্রথম টিউশনের সুযোগ পাই। মাস শেষে হাতে এল ৬০০০ টাকা। সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রথম আয় দিয়ে পরিবারের জন্য কিছু কিনব। আব্বুর জন্য শার্ট, আম্মুর জন্য থ্রি-পিস, দাদুর জন্য হিজাব। কিছু টাকা জমিয়ে নিজের জন্য স্নিকারও নিলাম। নিজের উপার্জনে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর যে আনন্দ, সেটাই আমার স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম ঈদের সেরা প্রাপ্তি!