Ajker Patrika

মনোযোগের শক্তিকে কাজে লাগানোর কৌশল হাইপারফোকাস

সাব্বির হোসেন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

(বই থেকে শেখা)

আমরা প্রতিদিন অনেক কাজ করি। কিন্তু দিন শেষে সত্যিই কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারি? আমরা কি আসলেই কাজে ডুবে যেতে পারি, নাকি সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল কিংবা ছোটখাটো ব্যস্ততায় আমাদের মনোযোগ হারিয়ে যায়? ক্রিস বেইলি তাঁর বই ‘হাইপারফোকাস’-এ দেখিয়েছেন, মনোযোগের শক্তি কীভাবে আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।

‘হাইপারফোকাস’ মানে হলো গভীর মনোযোগ ধরে রেখে নির্দিষ্ট কাজে লেগে থাকা। এটি এমন একটি দক্ষতা, যা সময় ব্যবস্থাপনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সময় সবার জন্য সমান। কিন্তু মনোযোগ ব্যবহারের ক্ষমতা সবার এক নয়। ক্রিস বেইলির বই থেকে আজ জানব, কীভাবে হাইপারফোকাস আমাদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে পারে এবং বিভ্রান্তি কমিয়ে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

মনোযোগের খেলা

গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা প্রতিদিন গড়ে ৫৬৬ বার স্মার্টফোন আনলক করি। দৈনিক প্রায় ৮৮ বার ই-মেইল চেক করি। প্রতিবার মনোযোগ বিভ্রান্ত হলে, আগের কাজের ফোকাস ফিরে পেতে প্রায় ২৩ মিনিট সময় লাগে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। বেইলি বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা মানে দিনে বেশি কাজ করা নয়, বরং প্রতিটি মুহূর্তে সঠিক কাজ বেছে নেওয়া।’ তাই হাইপারফোকাসের মূলমন্ত্র হলো, অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

হাইপারফোকাস

হাইপারফোকাস করার জন্য বেইলি চারটি ধাপের পরামর্শ দিয়েছেন।

  • লক্ষ্য বাছাই করুন: এমন একটি কাজ বেছে নিন, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: পরীক্ষার আগে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া বা প্রজেক্ট ডেডলাইনের আগে রিপোর্ট লেখা।
  • বিভ্রান্তি দূর করুন: ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। কাজের জায়গা গোছানো থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
  • মনোযোগ ধরে রাখুন: কাজের মাঝে বারবার বিরতি নিলে মনোযোগ নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে পমোডোরো টেকনিক অনুসরণ করুন। ২৫ মিনিট কাজ করে ৫ মিনিট বিরতি নিন।
  • মন ফিরিয়ে আনুন: কাজ করতে করতে মন অন্য দিকে চলে গেলে আতঙ্কিত হবেন না। ধৈর্য ধরে আবার মূল লক্ষ্যে ফিরে আসুন।

একটি কার্যকর কৌশল হলো, প্রতিদিন অন্তত ৯০ মিনিটের জন্য ‘ডিপ ওয়ার্ক ব্লক’ নির্ধারণ করা, যেখানে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেওয়া হবে।

স্ক্যাটারফোকাস

হাইপারফোকাস মানে শুধু গভীর মনোযোগ নয়, মাঝে মাঝে মনকে ঘুরতে দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। একে বলে ‘স্ক্যাটারফোকাস’, যা নতুন আইডিয়া তৈরি করতে সাহায্য করে।

  • ক্যাপচার মোড: মনে যা আসে, তা সঙ্গে সঙ্গে লিখে ফেলুন। উদাহরণ: একজন লেখক নতুন গল্পের আইডিয়া পেয়ে সেটি নোট করে রাখেন।
  • সমস্যা সমাধান মোড: যখন কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজছেন, তখন একটু হাঁটতে বের হন বা নতুন পরিবেশে যান। আইনস্টাইন তার থিওরির সমাধান পেয়েছিলেন ভেলায় চড়তে চড়তে।
  • অভ্যাসগত মোড: বাগান করা, রান্না করা বা গিটার বাজানোর মতো অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে এবং নতুন আইডিয়া আনতে সাহায্য করে।

মনোযোগ রিচার্জ

হাইপারফোকাস ধরে রাখতে হলে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে বেইলি কিছু সহজ উপায়ের কথা বলেছেন:

  • শখের কাজ করুন: ছবি আঁকা, সংগীতচর্চা বা বাগান করা আমাদের মনোযোগকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
  • ঘুমে গুরুত্ব দিন: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে মনোযোগ দুর্বল হয়ে যায়।
  • পরিবেশ বদলান: একই জায়গায় বসে কাজ করলে একঘেয়েমি আসে। মাঝে মাঝে নতুন জায়গায় কাজ করুন বা ছোট্ট একটা সফরে যান।

আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার অসংখ্য ফাঁদ রয়েছে। কিন্তু যারা হাইপারফোকাসের শক্তি রপ্ত করতে পারে, তারাই সফল হয়। ক্রিস বেইলি বলেন, ‘আপনি যা দেখেন, তা-ই আপনার বাস্তবতা। তাই দেখার জগৎকে সচেতনভাবে বেছে নিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত