Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

জাপান-বাংলাদেশের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে ‘জেনমিরাই’

কাওয়ামাতো ইয়াসুহিরো

কাওয়ামাতো ইয়াসুহিরো একজন জাপানি নাগরিক, যিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতিমূলক একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানে উচ্চশিক্ষা এবং পরবর্তী সময়ে চাকরির সুযোগ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি ‘জেনমিরাই এডুকেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আগামী জুনে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইয়াসুহিরোর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।

প্রশ্ন: আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাই। আপনি কী ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং বাংলাদেশ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

উত্তর: বাংলাদেশ আমার পছন্দের দেশ। এ দেশে সম্প্রতি আমার দ্বিতীয় সফর হয়েছে। আমি বর্তমানে জাপানে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি। উচ্চশিক্ষা শেষে তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সহায়তা করছি। চীন, তাইওয়ান, মিয়ানমার ও মঙ্গোলিয়া থেকে শিক্ষার্থী নিয়েছি। আর এখন বাংলাদেশ থেকেও শিক্ষার্থী নেওয়া শুরু করেছি। এ বছরের জুন মাসে আমি বাংলাদেশে একটি শাখা চালুর পরিকল্পনা করছি। আমার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষা শেখানো এবং তাদের ভবিষ্যতের গন্তব্য নির্ধারণে সহায়তা করা। কেউ যদি জাপানি ভাষা শিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চায় বা সরাসরি কাজের জন্য যেতে চায়, তাদের জন্য আমি এই সেবা দেব। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। তিনি চান, বাংলাদেশিদের জন্য জাপানের দ্বার আরও উন্মুক্ত হোক। এ ছাড়া জাপানি সংস্কৃতি বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া এবং আরও বেশি বাংলাদেশির জাপানে যাওয়ার সুযোগ তৈরির প্রত্যাশাও রয়েছে।

প্রশ্ন: জাপানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কী কী পরীক্ষা দিতে হয়। এসব পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর: জাপানে পড়াশোনার জন্য জাপানি ভাষা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইংরেজি মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যারা জাপানি ভাষায় পড়াশোনা করতে চায়, তাদের সাধারণত ১-২ বছর জাপানি ভাষা স্কুলে ভর্তি হয়ে ভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। জাপানি ভাষার সবচেয়ে স্বীকৃত পরীক্ষা হলো JLPT (Japanese Language Proficiency Test)। এটি পাঁচটি স্তরে বিভক্ত—N5 (নিচু স্তর) থেকে N1 (উচ্চ স্তর)। সাধারণত জাপানি কোম্পানিতে চাকরি পেতে N3 স্তর প্রয়োজন। অনার্স কোর্সের জন্যও এটি যথেষ্ট। তবে কিছু ক্ষেত্রে N2 স্তর দরকার হয়। মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সের জন্য সাধারণত N2 স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য EJU (Examination for Japanese University Admission for International Students) পরীক্ষা দিতে হয়, যা SAT পরীক্ষার মতো। EJU পরীক্ষার মোট নম্বর ৮০০। এর মধ্যে ৪০০ নম্বর জাপানি ভাষার, ২০০ নম্বর গণিতের এবং ২০০ নম্বর বিজ্ঞান (ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি) বিষয়ের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কেউ EJU পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কারণ, বাংলাদেশে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কোনো কেন্দ্র নেই। তবে চীন, ভারত, মিয়ানমার ও তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত JLPT দিয়েই জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

প্রশ্ন: আপনার পরিকল্পিত প্রতিষ্ঠান জেনমিরাই কীভাবে শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করবে?

উত্তর: জেনমিরাই শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষা শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি পাওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। আমি নেটিভ জাপানি শিক্ষকদের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা প্রদান করব; যা বাংলাদেশে বসেই শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পারবে। এতে তাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। কারণ, জাপানে গিয়ে ভাষা কোর্স সম্পন্ন করার প্রয়োজন হবে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জেনমিরাই সরাসরি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার ব্যবস্থা করবে। সাধারণত একজন শিক্ষার্থীকে জাপানে গিয়ে ভাষা কোর্স সম্পন্ন করতে হয়; যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তবে জেনমিরাই এই সমস্যার সমাধান করবে। শিক্ষার্থীদের জাপানের চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে এবং উপযুক্ত সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে আমার কোর্সটি কিছু জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যায়ন করছে এবং আমাদের প্রশিক্ষণ ও JLPT পরীক্ষার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। জেনমিরাই একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী উপযুক্ত কোর্সে ভর্তি নিশ্চিত করা হবে।

প্রশ্ন: জাপানে ভাষা শিক্ষার জন্য সাধারণত কত খরচ হয়, জেনমিরাই কত খরচ নেবে?

উত্তর: জাপানে দেড় থেকে দুই বছরের ভাষা কোর্সে শুধু টিউশন ফি বাবদ প্রায় ৮ লাখ ইয়েন (বাংলাদেশি ৬-৭ লাখ টাকা) খরচ হয়। এ ছাড়া থাকা-খাওয়ার খরচ প্রতি মাসে ৭৭,০০০-৮০,০০০ ইয়েন। জেনমিরাই বাংলাদেশে স্বল্প খরচে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে; যাতে শিক্ষার্থীদের আর অতিরিক্ত ব্যয় করতে না হয়। জেনমিরাই JLPT কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীদের এক বছরে প্রায় ৪০,০০০ টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া IELTS ও TOEFL কোর্সের ব্যবস্থাও থাকবে। যারা শুধু জাপানি ভাষা শিখতে চায়, তাদের এক বছরে ৩২-৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ৩-৪ লাখ ইয়েনের মধ্যে থাকবে। তবে এর মধ্যে ভিসা ফি অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুতের সেবা আমি দেব।

প্রশ্ন: জাপানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ এবং দৈনন্দিন জীবনের খরচসম্পর্কিত তথ্য, সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসস্থান, টিউশন ফি এবং খাবারের খরচ কেমন হয়?

উত্তর: জাপানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ গড়ে ৪০০ মান (প্রতি ১০ হাজার ইয়েনে ১ মান), অর্থাৎ ৪০ লাখ ইয়েন। মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়তে চাইলে ৫০০ মান, আর বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইলে প্রায় ৫৫০ মান খরচ হতে পারে। টিউশন ফি, বাসস্থান এবং দৈনন্দিন খরচ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দিতে গেলে বলা যায়, জাপানে উচ্চশিক্ষার খরচ ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম। বাসস্থান খরচ শহর অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। টোকিওতে একটি সাধারণ বাসা ভাড়া ৮০,০০০ ইয়েন হতে পারে। তবে মফস্বলে তা ৬০,০০০ ইয়েনে পাওয়া যায়। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী এককভাবে চলে যায়, তারা তিন-চারজন মিলে একটি বাসায় থাকে। ফলে তাদের প্রতিজনের খরচ ১৫ থেকে ২০ হাজার ইয়েন পর্যন্ত হয়। ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলে ভাড়া কম হয়। সাধারণত ৪০,০০০ ইয়েন থেকে শুরু হয়। তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট খরচ ৬০,০০০ ইয়েনের কাছাকাছি হতে পারে। খাবারের খরচ সম্পর্কে বললে, মাছ ও শাকসবজি সহজলভ্য। তবে কিছু বিদেশি ফলমূল বা শাকসবজির দাম বেশি হতে পারে। অনেকে বাড়ির আশপাশে শাকসবজি চাষ করে এবং অবশিষ্ট অংশ বিক্রি করে দেয়।

প্রশ্ন: কত শতাংশ বৃত্তি পেলে একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজ দেশ থেকে আর কোনো খরচ নিতে হবে না?

উত্তর: সাধারণত জাপান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৩০% বৃত্তি দেয়; যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্ত হয়। এই বৃত্তির অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি জাপান সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করে। তবে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত বৃত্তির জন্যও আবেদন করতে পারে। বৃত্তির পরিমাণ নির্ভর করে শিক্ষার্থীর একাডেমিক পারফরম্যান্সের ওপর। কেউ ৫০%, কেউ ৭০%, আবার কেউ ১০০% পর্যন্ত বৃত্তি পেতে পারে। যদি একজন শিক্ষার্থী ৭০% বৃত্তি পায় এবং পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করে, তাহলে সাধারণত তাকে নিজ দেশ থেকে আর কোনো অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয় না।

প্রশ্ন: একাডেমিক যোগ্যতা ও ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষার স্কোরের পাশাপাশি আর কী ধরনের যোগ্যতা থাকলে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়?

উত্তর: শিক্ষার্থী যদি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় থাকে বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ ছাড়া জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে হলে এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পারপাস) লিখতে হয়। যার এসওপি যত ভালো ও কার্যকর হবে, তার বৃত্তির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: জাপানে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য কী কী ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়?

উত্তর: গ্র্যাজুয়েশন বা মাস্টার্সের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো—

  • একাডেমিক শিক্ষার সনদ ও নম্বরপত্র
  • পরিবারের আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিবরণ
  • এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পারপাস)
  • JLPT (Japanese Language Proficiency Test) স্কোরের সনদ
  • IELTS স্কোরের সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)

বিশেষ করে মাস্টার্সের জন্য এসওপি আরও উন্নত ও গবেষণামূলক হতে হবে, যাতে আবেদনকারীর আগ্রহ, লক্ষ্য এবং দক্ষতা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

প্রশ্ন: আপনার প্রতিষ্ঠান ‘জেনমিরাই এডুকেশন’ বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা করে?

উত্তর: জেনমিরাই এডুকেশন নিয়মিতভাবে জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে। ফলে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সর্বোত্তম সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে। শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাওয়ার জন্য কীভাবে আবেদন করবে, এসওপি কীভাবে লিখতে হবে, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে—এসব বিষয়ে জেনমিরাই এডুকেশন প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

প্রশ্ন: জাপানে পড়াশোনা করার জন্য ভাষাগত দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? TOEFL/IELTS বা JLPT-এর কোন স্তর প্রয়োজন?

উত্তর: জাপানি ভাষা শিখতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে এর ব্যাকরণ অনেকটা বাংলা ভাষার সঙ্গে মিলে যায়; যা বাঙালিদের জন্য ভাষাটি শিখতে সহায়ক। জাপানি ভাষার উচ্চারণও বাংলা ভাষার সংগতি অনুযায়ী অনেকটা সহজ হয়ে যায়। যেসব শিক্ষার্থী জাপানে পড়াশোনা করতে চায়, তাদের সাধারণত দুই ধরনের সুযোগ রয়েছে। যদি ইংরেজি জানা থাকে, তাহলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া যায়। যদি জাপানি ভাষা শেখা যায়, তাহলে জাপানি মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যায়। জাপানে শিক্ষার্থীরা সাধারণত JLPT (Japanese-Language Proficiency Test) ন্যূনতম N5 বা N4 স্তর সম্পন্ন করতে পারে। জাপানে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি হতে চাইলে, IELTS-এর স্কোর ৫.৫ থাকলেই আবেদন করা সম্ভব। তবে বৃত্তি পেতে চাইলে IELTS-এর স্কোর ৭ বা তার বেশি হওয়া উচিত। যদি স্কোর ৮ হয়, এবং আপনার সহশিক্ষা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে আপনি ৮০% অথবা কিছু ক্ষেত্রেও ১০০% বৃত্তি পেতে পারেন।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের বৃত্তির সুযোগ রয়েছে? নির্বাচনের মূল মাপকাঠি কী?

উত্তর: জাপানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। প্রধানত, দুটি ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়—সরকারি ও বেসরকারি—এবং উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে। এর মধ্যে MEXT (Monbukagakusho Scholarship) অন্যতম প্রধান স্কলারশিপ, যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে পাওয়া যায়। আমি এরই মধ্যে মিয়ানমারের দুই শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপ পেতে সহায়তা করেছি। আরেকটি স্কলারশিপ হলো JASSO (Japan Student Services Organization), যা সরকারি ও বেসরকারি—উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। এটি বিশেষ করে ভাষাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। যদি কোনো শিক্ষার্থী JLPT N2 স্তরে পৌঁছাতে পারে, তাহলে সে JASSO স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে এটি দুই বছর পর্যন্ত এবং অন্য ক্ষেত্রে চার বছর পর্যন্ত দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির নির্বাচন মূলত একাডেমিক পারফরম্যান্স, ভাষাগত দক্ষতা এবং অন্যান্য যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে হয়। প্রতিবছর প্রায় ৩০% আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এসব বৃত্তি পেয়ে থাকে।

প্রশ্ন: যেসব শিক্ষার্থী নিজের খরচে পড়তে যেতে চান, তাঁদের জন্য কি কোনো আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা বা লোনের সুবিধা আছে?

উত্তর: হ্যাঁ, কিছু আর্থিক সহায়তা এবং লোনের সুবিধা রয়েছে। MEXT, JASSO ছাড়াও কিছু জাপানি ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট লোন দিয়ে থাকে; যা সাধারণত কম সুদের হারে দেওয়া হয়। এই লোনের জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে এই সহায়তা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: পার্টটাইম চাকরির সুযোগ কেমন? শিক্ষার্থীরা কত ঘণ্টা কাজ করতে পারেন এবং ঘণ্টাপ্রতি উপার্জন কেমন?

উত্তর: জাপানে ছাত্রদের জন্য পার্টটাইম চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে এখানে কিছু শক্তিশালী নিয়মকানুন রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। এর বেশি কাজ করলে তার ভিসায় সমস্যা হতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি ৩-৪ মাস বন্ধ থাকে, তাহলে এই সময়ে শিক্ষার্থীদের ফুলটাইম কাজের সুযোগও দেওয়া হয়। সাধারণত শিক্ষার্থীরা রেস্তোরাঁ, কম্বিনিয়েন স্টোর এবং ডেলিভারি ম্যানের কাজ করে। এমন শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাপ্রতি বেতন ১,১০০ ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,০০০ টাকা) পেতে পারে। তবে টোকিওর মতো বড় শহরে এটি ১,২০০ থেকে ১,৩০০ ইয়েন পর্যন্ত হয়।

প্রশ্ন: জাপানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কোনো বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়? আবেদন প্রক্রিয়া কীভাবে পরিচালিত হয় এবং এতে কতটা সময় লাগে?

উত্তর: বিশেষ করে EJU (Examination for Japanese University Admission) পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমে কোর্সও অফার করে। সে ক্ষেত্রে TOEFL বা IELTS স্কোর প্রয়োজন হতে পারে। আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত অনলাইনে হয়, যেখানে আবেদনপত্র, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ হতে পারে, প্রক্রিয়া শুরু থেকে ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সাধারণত ৬-১২ মাস সময় লাগে। তবে জেনমিরাইয়ের মাধ্যমে আবেদন করলে সহজে ভর্তি হওয়া যায়।

প্রশ্ন: Masters/ PhD করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সুপারভাইজার খোঁজার পদ্ধতি এবং আবেদন করার সঠিক উপায় কী?

উত্তর: জাপানে প্রফেসরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা একটু কঠিন। কারণ, সেখানে হাজারো আবেদন জমা পড়ে। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করলে অনেক সময় আবেদনটি নজরে আসে না। কারণ, অনেক মেইল একসঙ্গে আসে। তবে জেনমিরাইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। তারা আপনার জন্য উপযুক্ত সুপারভাইজার খুঁজে প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং আপনাকে সেখানে বসিয়ে দেয়। এতে আপনার বাদ পড়ার সুযোগ কমে যায়। কারণ, আপনার আবেদনকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি সরাসরি আবেদন করার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে (যেমন কেমিস্ট্রি) অধ্যয়ন করতে চান।

প্রশ্ন: জাপানে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন? বাংলাদেশি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সেক্টর কোনগুলো?

উত্তর: জাপানে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই শিক্ষার্থীর দক্ষতা, ভাষাগত সক্ষমতা এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে। তবে জাপানে গড় আয়ু বেশি হওয়ায় তাদের জনসংখ্যার গড় বয়স প্রায় ৪৮ বছর, আর বাংলাদেশের গড় বয়স প্রায় ২৮ বছর। জাপানে সাধারণত ৬০ বছর বয়সে মানুষ অবসরে যায়, ফলে তাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে যায়। এই শ্রমশক্তির ঘাটতি পূরণে জাপান বিদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বাড়াচ্ছে, যা বাংলাদেশিদের জন্য একটি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। জাপানে বাংলাদেশিদের সুনাম আছে; কারণ, এরা কাজের প্রতি আন্তরিক। বর্তমানে জাপানে সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন সেক্টর হচ্ছে—অটোমোবাইলস। এ ছাড়া আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রিকালচার এবং নার্সিং কেয়ারের চাহিদা রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-সম্পর্কিত কাজেরও চাহিদা রয়েছে। এমনকি এক চায়নিজ শিক্ষার্থীকে নিটোরি কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার পর সে এখন চীনে কাজ করলেও জাপানি বেতন পাচ্ছে। স্নাতকের পরে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশিদের জবপ্লেসমেন্ট অনেক বেশি। এর কারণ হলো, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভালো বলতে পারে, জাপানি ভাষাও জানে এবং আরও কিছু ভাষায় দক্ষতা রাখে। এ কারণেই জেনমিরাই এখানে কাজ শুরু করেছে।

প্রশ্ন: জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়?

উত্তর: জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা খুব সহজ। আপনি যদি জব পারপাসে একা থাকেন, ২ লাখ ৫০ হাজার ইয়েন বেতন পান এবং কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স না থাকে, তবে আপনি ৫ বছরের মধ্যে স্থায়ী ভিসা পেয়ে যাবেন। যদি আপনি পরিবারসহ থাকেন, তবে প্রত্যেক সদস্যের জন্য বছরে ৭০ লাখ ইয়েন আয় করতে হবে। অর্থাৎ ৪ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য প্রায় ৫০০ লাখ ইয়েন প্রয়োজন। এমনকি, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করে এই পরিমাণ আয় করতে পারেন। জাপানে জন্মগ্রহণ করা শিশুকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না। নাগরিকত্ব পেতে হলে পিতা-মাতা যদি জাপানি নাগরিক হন, তবে শিশুর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হয়।

প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী, জেনমিরাই প্রতিষ্ঠান কীভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করবে এবং তাদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার উন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রাখবে?

উত্তর: আমি জাপানে ২০টি হাইস্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়াই। এই স্কুলগুলোতে আমি শুধু টেক্সটবুকের টাকা নিয়ে থাকি। আমার স্কুলে ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে আমি সম্পূর্ণ ফ্রি পড়াচ্ছি। বর্তমানে আমি বাংলাদেশে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করেছি এবং এই ব্যবসার লাভের একটি অংশ সমাজসেবা কার্যক্রমে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জেনমিরাই বিশেষভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে, যাতে তারা জাপানে এসে কোনো ধরনের সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন না হয় এবং তাদের পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নে সহায়তা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: শিক্ষার্থী ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের দক্ষ করে জাপানে কর্মসংস্থান করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

উত্তর: শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আমি আরেকটি পরিকল্পনা করেছি। বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ জাপানিজ গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থারও জাপানের সঙ্গে মিল আছে। আমি বাংলাদেশের ড্রাইভারদের জাপানিজ ভাষা শিখিয়ে, জাপানে নিয়ে গিয়ে ড্রাইভার পেশায় কর্মসংস্থান করার ব্যবস্থা করতে চাই।

প্রশ্ন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

উত্তর: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত