সম্পাদকীয়
বাংলা সাহিত্যের এক নক্ষত্রের নাম সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার।
ওয়ালীউল্লাহর জন্ম ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে। পিতার চাকরিসূত্রে তিনি দেশের নানা জায়গার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে আইএ এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংকশনসহ বিএ পাস করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। ছাত্রজীবনে তিনি কলকাতার দৈনিক স্টেটম্যান পত্রিকায় চাকরি করেন।
দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় এসে প্রথমে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক ও পরে করাচি কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক হন। তিনি দিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস সহদূত হিসেবে কাজ করেন। এরপর প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন এবং ইউনেসকোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫২ সালে দিল্লি থেকে তিনি বদলি হন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তাঁর সঙ্গে ফরাসি নারী অ্যান মেরির বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক হয়। ১৯৫৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। এরপর ফ্রান্সেই স্থায়ী হন।
ঢাকা কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াকালীন তাঁর প্রথম গল্প ‘সীমাহীন এক নিমেষে’ ছাপা হয়েছিল কলেজ ম্যাগাজিনে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, ভণ্ডামি, কুসংস্কারকে ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি তাঁর লেখায়। তাঁর হাতে সৃষ্টি হয়েছে ‘লালসালু’, ‘কাঁদো নদী কাঁদো’, ‘চাঁদের অমাবস্যা’র মতো উপন্যাস, ‘নয়নচারা’, ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্পে’র মতো গল্পগ্রন্থ এবং ‘বহিপীর’, ‘তরঙ্গভঙ্গ’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ নামে তিনটি নাটক। ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’ ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন তাঁর স্ত্রী মেরি। পরে উপন্যাসটি ‘ট্রি উইথআউট রুটস’ নামে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধু বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে মিলে ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন তৈরির জন্য কাজ করেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর তিনি প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।