মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম ভালো থাকলেও বর্তমানে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দাম মণপ্রতি ৬০০ টাকা কমেছে। এ অবস্থায় পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।
রাজশাহীর চারঘাটের পাটচাষিরা বলছেন, পাট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করায় কম দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তবে পাট ব্যবসায়ীদের দাবি, মিলমালিকেরা নানা অজুহাতে দাম কমিয়ে দেওয়ায় তাঁদের কৃষকদের কাছে থেকে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে। মিলমালিকদের পাট সংগ্রহে আগ্রহ না থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট উপজেলায় গত বছর ২ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর বেশি। এবার জমিতে ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম নিয়ে কৃষকদের আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ছিল। তারপরও দো-ফসলি জমিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই বাড়তি খরচে পাট চাষ করেন তাঁরা।
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে পাট ব্যবসায়ীরা ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কিনছিলেন; কিন্তু বর্তমানে তাঁরা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে পাট কিনছেন। দাম কমার কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় পাট কিছুটা ভেজা থাকছে এবং মিলমালিকেরা পাট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
উপজেলার রাওথা এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির হিসাব করে দেখেছেন যে বীজ কেনা, জমিচাষ, সার প্রয়োগ, পাট কাটা, গাড়িতে পাট নিয়ে যাওয়া, পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দেওয়া ও পরিষ্কার করার মজুরি বাবদ প্রায় ৫ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ ওই এক বিঘা জমির পাট ও পাটখড়ি বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৭০০ টাকা।
উপজেলার ভাটপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছি। সেই পাট এখন ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো পাটের দাম নির্ধারণ করছেন। তাঁদের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলার শলুয়া এলাকার পাইকারি পাট ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, পাটের দাম মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করে। মিল মালিকেরা দাম কমিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়েই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে। মিল মালিকেরা পাট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে কৃষকের কাছে থেকে বেশি দামে পাট কিনতে পারবেন না। তা ছাড়া এ বছর পাটের মানও খারাপ।
এ বিষয়ে পাট উন্নয়ন অফিসের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘প্রতিবারের তুলনায় এ বছর পাট চাষে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এ অবস্থায় সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দাম কমে গেছে। পাটের ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা বিষয়টি পাট অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা বাজার তদারকি করছে।’