খান রফিক, বরিশাল
জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ক্রমান্বয়ে কমলেও বরিশাল বিভাগে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল হলো বরিশাল। অবকাঠামোগত নানা উন্নয়নের পরও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, টেকসই উন্নয়ন না হওয়া ও কর্মসংস্থানের অভাবকে দায়ী করছেন।
বরিশাল বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১০ সালে বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৯.৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৬.৫ শতাংশে। সবশেষ ২০২২ সালে তা পাওয়া গেছে ২৬.৯ শতাংশ। অথচ জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ। গ্রামীণ এবং নগরের সূচকেও এই বিভাগে দারিদ্র্য বেশি।
কারণ খুঁজতে গিয়ে নগরীসহ বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী থেকে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নগরীর দক্ষিণাংশে কীর্তনখোলা তীরে হাঁটতে হাঁটতে অসংখ্য শিশুকে দেখা গেল। জীর্ণশীর্ণ এই শিশুদের চোখে ফুটে উঠেছে দারিদ্র্যের ছাপ। নগরে থাকলেও অভাব যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না।
এখানকার স্টেডিয়াম বস্তিতে ৩০ বছর ধরে থাকেন বাবুল মিয়া। রিকশা চালিয়ে জীবনধারণ করা বাবুল বলেন, সংসারের খরচ এত বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে। এখনো আগের মতোই ছাপড়া ঘরে থাকছেন। সরকার বলেছিল তাঁদের জমি দেবে কিন্তু এখনো গৃহহীন তাঁরা। একই কথা জানিয়ে দিনমজুর শহিদুল আলম জানান, এই নদীতীরে প্রায় ৫ হাজার পরিবার আছে। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
দ্বীপ জেলা ভোলা সদরের জোড়খাল এলাকায় বেড়িবাঁধে জীবনযাপন করছেন মানছুরা বেগম। তিনি জানান, অভাব তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। পাশের বেদে পল্লির ষাটোর্ধ্ব নুর মোহাম্মদ বলেন, সংসার চলে নদীতে মাছ ধরে। বর্তমানে নদীতে মাছ নেই। কয়েক বছর ধরে সংসার চলছে টেনেটুনে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরিশাল ফর এভার লিভিং সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বরিশালে ১৫ বছর ধরে এমন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়নি যিনি মানুষের কর্মসংস্থান জোগাবেন, জীবনমান বাড়াবেন। তাহলে দারিদ্র্য কীভাবে কমবে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল পরিসংখ্যান কার্যালয়ের বিভাগীয় যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বরিশালে এতটা দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তিনি জানান, নগরীর পকেট এলাকাগুলোয় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি পলাশপুরকে উল্লেখ করে বলেন, তাঁদের জীবনমান অনেকটাই নিম্নমানের।