মানিকগঞ্জের ঘিওরে সোনালি আঁশের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। পাটের ভরা মৌসুম থেকে শুরু করে সারা বছরই পাটকাঠি চড়া মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। পাটকাঠির ভালো দামে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে।
সোনালি আঁশের কদর বহুদিন ধরেই রয়েছে কৃষিনির্ভর জেলা মানিকগঞ্জে। তবে ৪-৫ বছর আগেও অবহেলা-অনাদরে পাটকাঠি পড়ে থাকত গ্রামের মেঠোপথ বা বাড়ির আঙিনার এক কোণে। সাধারণত মাটির চুলায় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহার হতো পাটকাঠি। কিন্তু বর্তমানে এটি নানা কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এতে বেড়েছে চাহিদা।
উপজেলার বানিয়াজুরী, ঘিওর সদর, বালিয়াখোড়া, নালী, বড়টিয়া, সিংজুরী, পয়লা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, সেখানকার কিষান-কিষানিরা এখন পাট ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি পাটকাঠি শুকিয়ে বেশ যত্ন করে গুছিয়ে রাখছেন।
বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক কবির খান বলেন, কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না, কিন্তু এখন এর চাহিদা বেশ। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনে নিচ্ছেন, দামও দিচ্ছেন ভালো। ১০০ পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে।
রাধাকান্তপুর গ্রামের চাষি মুন্নাফ মোল্লা বলেন, ‘জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনির কাজে ব্যবহার হতো পাটকাঠি। এখন ভালো দামে বিক্রি হয়।’
মালুচি গ্রামের পানচাষি উকিল উদ্দিন বলেন, ‘একসময় বরজে পানের লতা দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য বাঁশের শলা ব্যবহার করা হতো। মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের বিকল্প হিসেবে ব্যাপকভাবে পাটকাঠির ব্যবহার শুরু হয়েছে।’
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, পাটকাঠিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কারখানা। একদিকে সোনালি আঁশ, অন্যদিকে রুপালি কাঠি—দুটি মিলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাট উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা চলতি বছর পাটের আঁশ ও কাঠি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, চলতি বছর উপজেলায় ৩০৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবার পাটের দামও ভালো। পাটকাঠি বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।