দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার শাখা নদীগুলোও। এখন চলছে জাটকা ধরায় আট মাসের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ২০ মে থেকে শুরু হবে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
এভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরতে না পেরে বিপাকে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো। এদিকে নিষেধাজ্ঞার পরও সুফল মিলছে না সেভাবে। সম্প্রতি দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদী ও সাগরে আশানুরূপ ইলিশ পাননি। এ নিয়ে হতাশ মৎস্যজীবীরা।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই বিভাগে ৪ লাখ ২০ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৯ জন। তিনি বলেন, মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ছিল নির্ধারিত এলাকায়। সামনে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলেদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সামনের দিনে নদী ও সাগরে ইলিশ মিলবে।
তবে নদ-নদীতে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় দুই মাস মাছ ধরেননি। মেঘনায় তিন দিন জাল ফেলেও ইলিশের দেখা সেভাবে পাচ্ছেন না। যেটুকু পেয়েছেন, তাতে সংসার চলবে না। এখন মহাজন তাড়া দিচ্ছেন দেনা শোধ করতে।
বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনের জেলে রিয়াজ হোসেন বলেন, কালাবদর নদে সোমবার মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন তাঁরা। হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার বিভিন্ন অভয়াশ্রমে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩৭ হাজার জেলে মাছ ধরতে নেমেছেন। নদীতে পানি বাড়ছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ধরা পড়ছে।
বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খান হাবিব বলেন, একের পর এক বিধিনিষেধে জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে ইলিশের সংকট। গত সোমবার এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ১০০ টাকা, এলসি সাইজ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৬০০ এবং ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, জেলেরা পেটের ক্ষুধায় নদীতে নামেন। বিধিনিষেধে তাঁদের অনেক কষ্ট করতে হয়। তারপরও অনেক প্রকৃত জেলে সহায়তা পাচ্ছেন না।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে মাছ কম পাচ্ছেন জেলেরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে এবং নদীতে স্রোত বাড়লে ইলিশ আসবে। তিনি আরও বলেন, ২০ মে থেকে সাগরে ইলিশ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু উপলক্ষে উপকূলের প্রতি জেলেকে প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।