বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
করোনার প্রভাবে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়ায় ও দাম কম থাকার কারণে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পানচাষিরা। বর্তমানে অনেক চাষিই পানের বরজ ভেঙে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিষ্টি পান চাষে উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত বালিয়াকান্দির বিভিন্ন অঞ্চল। এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহু পুরোনো। এখানে সাধারণত দুই জাতের পানের উৎপাদন হয়। মিষ্টি পান আর সাচি পান। মিষ্টি পান রাজবাড়ী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ৮টি দেশে রপ্তানি করা হয়। এতে বেশ ভালো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে প্রতি বছর এ খাত থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে দাবি করেন পানচাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাতে ৮৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়েছে। ৬৫৮টি মিষ্টি পানের বরজ, ১৫৬টি সাচি পান বরজসহ ৮১৪টি বরজে পানের চাষ হয়েছে।
পান চাষি গণেশ মিত্র বলেন, ‘বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি, বহরপুর, যদুপুর এলাকায় ব্যাপক পানের আবাদ হয়। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এখনো পানের চাষ করে যাচ্ছি। তবে এখন পানের দাম একেবারেই কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
গণেশ মিত্র আরও বলেন, ‘৮০টি পান আগে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতো, সেই পান এখন মাত্র ৪-৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে একেকটি পান কিনে খেতে গেলে ঠিকই ৫ টাকা দিয়েই কিনে খেতে হয়। তাহলে আমাদের অবস্থা কি আপনারাই বোঝেন।’
পান চাষি আলোক রাহা বলেন, করোনার কারণে পানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ বছর বেশ লাভের আশা করছিলাম। তবে এখন পানের দাম নেই। তা ছাড়া আগে বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর পান বিদেশে পাঠাতে পারছি না। দাম না থাকার কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো পরামর্শ দিচ্ছেন না।
পান চাষি কার্তিক রাহা, পঙ্কজ ইন্দ্র বলেন, ‘পান অর্থকরী ফসল হলেও সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পাই না। সরকারিভাবে আমাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরও লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানকার মিষ্টি পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ৮টি দেশে রপ্তানি করা হতো। এখন রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে পান রপ্তানি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পান চাষিদের সব সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে চাষিদেরও তাঁদের সমস্যাগুলো আমাদের জানাতে হবে। তাহলে আমরা তাঁদের সুপরামর্শ দিতে পারব।’