ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কে অটোরিকশা চালান জামিল হোসেন। বাড়ি পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নে। নবম শ্রেণি পাস জামিলের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখা গেল না। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সোজাসাপ্টা জবাব, ‘নৌকা মার্কার সাথে ধানের শীষ নাই, এডা কোনো নির্বাচন?’
ব্যাখ্যা দিয়ে জামিন বললেন, ‘ফুটবল খেলায় একদল না আইলে যেমুন ওই দল দুই ভাগ হয়ে নিজেরা নিজেরা খেলে; তেমনি আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা ভোটাভুটি খেলছে। এহানে আমাগো কী?’ তাঁর আরেক ক্ষোভ—‘হুনছি নৌকা মার্কার প্রার্থী আহমদ হোসেন অনেক বড় নেতা, কিন্তু আমগো গেরামের মানুষেরা হ্যারে চেনে না। কুনুদিন দেহি নাই।’
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে নৌকার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের টানা পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন সম্পর্কে এমনই মন্তব্য এই ভোটারের। গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মননিংহ থেকে নেত্রকোনা যাওয়ার পথে প্রতিবেদকের কাছে এ মন্তব্য করেন জামিল।
শুধু জামিল নন, নেত্রকোনা বাসস্ট্যান্ডে বাসের হেলপার নাজমুল হাসানও বললেন, ‘এলাকার (নেত্রকোনা-৩ আসনের আটপাড়া-কেন্দুয়া) সংসদ সদস্য অসীম বাবু ঢাকার অনেক বড় নেতা। দুদিন পরপর টেলিভিশনে দেহি, কিন্তু এলাকার খবর নাই। কাজের সময় তাঁরে পাওয়া যায় না। এমপিকে দেখতে চাইলে ঢাকার অফিসে যাইতে হয়।’
নেত্রকোনা ঘুরে জানা গেছে, এই জেলার পাঁচটি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সংসদ সদস্য ও আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ভিপি মোস্তাক আহমেদ রুহি প্রমুখ।
তবে জেলার পাঁচটি আসনের চারটিতেই এবার নির্বাচন জমিয়ে তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে নৌকার মাঝি মোস্তাক আহমেদ রুহির প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। ঝুমা এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত জালালউদ্দিন তালুকদারের মেয়ে। লড়াই হবে রুহির নৌকার সঙ্গে ঝুমার ট্রাকের।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এই আসনে তরুণদের মধ্যে জয় জনপ্রিয় হলেও প্রবীণেরা খসরুকেই পছন্দ করেন। ফলে এই আসনে লড়াই হবে খসরুর নৌকার সঙ্গে জয়ের ঈগলের।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল। এবারও তিনি নৌকা পেয়েছেন। এই আসনে সাবেক এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ট্রাক প্রতীকে এবং সাবেক এমপি মন্জুর কাদের কোরাইশী ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নৌকার সঙ্গে ট্রাকের লড়াই হওয়ার আভাস ভোটারদের।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে প্রথমবারের মতো নৌকার মাঝি হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন। তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম সোহেল ফকির (ট্রাক প্রতীক) এবং কর্নেল তাহেরের ভাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন (ঈগল)। তবে লড়াই হবে নৌকার সঙ্গে ট্রাকের।
এদিকে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের জয় প্রায় নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।