এই সময় প্রতিবছর বলতে গেলে পানিশূন্য হয়ে পড়ে তিস্তা নদী। চারদিকে ধু ধু বালুচর। কিন্তু এবার হঠাৎ করে তিস্তার যেন উল্টো রূপ। পানিতে টইটম্বুর। তলিয়ে যাচ্ছে চরগুলো। আর এতে নষ্ট হচ্ছে চরের জমিতে লাগানো মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, কাউন, মিষ্টিকুমড়া, গম, তামাক, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। না চাওয়া পানিতে বিপদে পড়েছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা এবং নীলফামারীর ডিমলার চরাঞ্চলের চাষিরা।
এপ্রিল মাসে তিস্তায় এ রকম পানি বৃদ্ধিতে হতবাক চরাঞ্চলের কৃষক। তাঁরা বলছেন, প্রায় ৩৫ বছর পর এই প্রথম এ সময়ে তিস্তায় এত পানি। অসময়ে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ডুবে গেছে। অন্যদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপারের এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোকুন্ডায় তিনটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গোকুন্ডা ও মহিষখোচা ইউনিয়নের চর এলাকায় ইতিমধ্যে কয়েক একর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ব্যারাজের ১১টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র ৩ হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩০০ কিউসেকে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা গোবধন এলাকার কৃষক ভুট্টো মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর চরে বোরো ধান, কাউন, পেঁয়াজ, রসুন চাষ করি। এবারও ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।’
তিস্তার চরে ২৫ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন দোয়ানী গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান। এর মধ্যে ১৮ বিঘা জমির গম ঘরে আনতে পেরেছেন। বাকিগুলো নদীতে ভেসে গেছে। এ ছাড়া ১৫ বিঘা পেঁয়াজের মধ্যে ১০ বিঘা ও ১০ বিঘা বোরো ধান নদীতে তলিয়ে গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বাড়লেও গতকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে ১২ হাজার ৩০০ কিউসেক পানি রয়েছে। পানি বাড়ায় কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
নীলফামারীর ডিমলায়ও তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। উপজেলার কিসামত চর, খড়িবাড়িসহ তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চলে পানি ওঠায় ভুট্টাখেত নষ্ট হচ্ছে। মরে যাচ্ছে মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন সবজিখেতের ফসল।
কিসামত চরের ভুট্টাচাষি খোকা মিয়া বলেন, ‘এ বছর ২০ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। এখন পানি জমে ভুট্টার গাছ পচে যাচ্ছে, পোকা ধরেছে।’