একটা সময় দুই দেশের র্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য ছিল উনিশ-বিশ। প্রতিবেশী দেশ ও একসময়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এখন র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশ্ব ফুটবলে তলানির দিকে থাকা বাংলাদেশ এখন তৃপ্তি খুঁজে পায় কালেভদ্রে ভারতকে আটকে দিতে পারলেই। র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ১০৫ নম্বরে থাকা ভারতের দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে এশিয়ান ফুটবলের অভিজাত শ্রেণিতে তাদের অবস্থান অনেকটা ধনীর গরিব আত্মীয়ের মতো। ক্রিকেটের দাপট এড়িয়ে ফুটবলকে এশিয়ার কুলীন শ্রেণিতে তোলার চেষ্টা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ)। সেই লক্ষ্যে ২৪ বছরের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এআইএফএফ।
২৪ বছরের মহাপরিকল্পনা
প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের দেশ ভারত তৃণমূল থেকে প্রতিভা খুঁজে আনার দিকে দিয়েছে বিশেষ নজর। ২৪ বছরের মহাপরিকল্পনাকে তিন মেয়াদে ভাগ করেছে এআইএফএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি ও ২০৪৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন এআইএফএফের নবনির্বাচিত সভাপতি কল্যাণ চৌবে।
লক্ষ্য ৫০ হাজার কোচ তৈরি
‘ভিশন ২০৪৭’ নামের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী সারা দেশে ৫০ হাজার কোচ তৈরি করতে চায় এআইএফএফ। এই কোচদের মধ্যে চার হাজার কোচ হবেন এএফসি ‘সি’ লাইসেন্সধারী, যাঁদের কাজ হবে তৃণমূল থেকে প্রতিভা খুঁজে ভারতের ফুটবলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করা। ২০২৬ সালের মধ্যে নিজেদের লভ্যাংশকে ৫০০ শতাংশ বাড়াতে চায় এআইএফএফ। ছেলেমেয়ে দুই দলকে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলানোর পরিকল্পনা ভারতের।
চমক আর্সেন ওয়েঙ্গার
এআইএফএফের এই মহাযজ্ঞে সবচেয়ে বড় চমকের নাম আর্সেন ওয়েঙ্গার। আর্সেনালের কিংবদন্তি এই ফরাসি কোচ এখন ফিফার ডেভেলপমেন্টের প্রধান। ফিফার হয়ে তো বটেই, ওয়েঙ্গার নিজেও আগ্রহী ভারতে কাজ করতে। ‘ভিশন ২০৪৭’কে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব ফুটবলের ‘পাওয়ার হাউস’ হয়ে ওঠার স্বপ্ন প্রতিবেশী ভারতের। তারা ফুটবলের পরাশক্তি হতে চায় ভালো পরিকল্পনা করেই।
বাফুফের পরিকল্পনা কী
একসময়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত যখন এগোচ্ছে বড় কিছুর লক্ষ্য সামনে রেখে, সেখানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অবস্থান কোথায়? ‘ভিশন ২০২২’ ঘোষণা দিয়ে সামনে এগোনো তো দূরে থাক, পেছাতে পেছাতে বাংলাদেশ এখন তলানির দিকে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন আটকে গেছে ‘কিছুই নেই’ বৃত্তে। সেই বৃত্ত থেকে বের হতে সরকারের দিকে তাকিয়ে বাফুফে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেডারেশনের চাওয়া ৫৮৭ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি নামের পাঁচ বছরমেয়াদি এই উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৯৭ কোটি টাকা চারটি একাডেমি ও নারী-পুরুষ জাতীয় দলের পেছনে খরচ করতে চায় বাফুফে। কমলাপুর ও গোপালগঞ্জে ছেলেদের দুটি এবং বাফুফে ভবন ও রাজশাহীতে মেয়েদের জন্যও দুটি একাডেমি গড়ার পরিকল্পনা বাফুফের। পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের বেতনভুক্ত জাতীয় দলও রাখতে চায় বাফুফে।
প্রকল্পের বাকি টাকা দিয়ে কী হবে সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের সহকারী ম্যানেজার তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় দলসহ একাডেমির জন্য বিদেশি কোচ আনব। থাকবে পরামর্শক। এই খাতে ব্যয় হবে ৯৩ কোটি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খরচ হবে ৯৭ কোটি টাকা।’
প্রকল্পের আওতায় বছরে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে বছরে ১৩টি করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বাফুফে। আর প্রকল্প খাতে ব্যয় করা হবে ৪০ কোটি টাকা। বাফুফের এই চাওয়া অর্থ মন্ত্রণালয় কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করে কাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁদের এই ‘ডিপিপি’ আমলে নিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়!
খুঁজতে হচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর
শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য অর্থ যদি পাওয়াও যায়, বাফুফে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। প্রশ্ন আছে, প্রকল্পের শেষে বাফুফের অবস্থান কী হবে, সেটা নিয়েও। পাঁচ বছর পর উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে না পারলে বাফুফের প্রকল্প কি থমকে যাবে? নিজেদের প্রকল্প নিজেরা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য কি হবে বাফুফের? দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় যেন আর্থিক সংকটের ছায়া না পড়ে, আগে নিজেদের আয় ৫০০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এআইএফএফ। এখনো পর্যন্ত নিজেদের একটি শক্তিশালী বিপণন বিভাগ গড়ে তুলতে পারেনি বাফুফে। যদিও বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের দাবি, সাফল্য পেলে ভবিষ্যতে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না তাঁদের। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘আগে আমাদের শুরু করতে হবে। যদি শেষটা ভালো করতে পারি, তখন না হয় দেখা যাবে কী হলে কী হবে।’