সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ২৪ ঘণ্টা গ্যাস নেই অনেক বাসায়। যাঁদের বাসায় গ্যাস রয়েছে, তাঁদের চুলাও জ্বলছে একেবারে নিভু নিভু করে। তা দিয়ে কোনো কিছু রান্না করা যায় না।
এ অবস্থায় কেউ কেউ বাড়তি খরচ দিয়ে লাকড়ির চুলায় রান্না করে কোনোমতে দিন যাপন করেছেন, আবার অনেকে অতিরিক্ত খরচে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা, শাপলা চত্বর, দোয়েল চত্বর, কামাল উদ্দিন সড়ক, হিরাঝিলসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা যায়। একইভাবে নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের শহরজুড়ে এই অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে ঢাকার দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকবে বিভিন্ন পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন বলে জানান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা। কিন্তু এলাকায় মাইকিং না করায় বেশির ভাগ মানুষ বিষয়টি জানতেন না। এতে চরম ভোগান্তিতে আছেন এলাকার বাসিন্দারা।
পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকার গৃহিণী রেবেকা সুলতানা জানান, ‘বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের বাসায় গ্যাস নেই। রাতে খাবার লাকড়ির চুলায় রান্না করে খেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত চুলায় একটুও গ্যাস আসেনি। সকালের নাশতা তো বাইরে থেকে কিনে এনেছি; কিন্তু দুপুর ও রাতে লাকড়ির চুলায় রান্না করে খেতে হচ্ছে। শুক্রবার কীভাবে রান্না করব তা বুঝতেছি না।’
পাইনাদি নতুন মহল্লা একতা সংঘের সদস্য নাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে গ্যাস নেই বাসায়। আমরা চরম দুর্ভোগে আছি। বাসায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছে না। অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় বাইরের খাবার কিনে নিয়ে যাব।’
অভিযোগ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ইমরান জানান, ‘আমি দুদিন ধরে ছুটিতে আছি, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এর আগে গত শনিবার তিতাস গ্যাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬০ কিলোমিটার উচ্চ চাপের সঞ্চালন পাইপলাইনের ইন্টেলিজেন্ট প্লাগইন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ জন্য ৬ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিন ঢাকার দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকবে।
একতা সংঘের সদস্য নাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি গ্যাসের চাপ বাড়ানোর জন্য লাইনে কাজ করছে; কিন্তু আমাদের জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি মাইকিং করতে পারতেন, তা হলে আমরা একটু সতর্ক হতে পারতাম। গ্যাসের এ সমস্যা তো আজকে নতুন নয়। প্রায় সময়ই তো বাসায় গ্যাস থাকে না।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, তিতাস গ্যাসের লোকেরা লাইনের কাজ করছেন, মূলত এ জন্য অনেক এলাকায় গ্যাস নেই। তবে তাঁরা কাজ করছেন, আশা রাখি আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে সবার বাসায় গ্যাস চলে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মুকবুল আহম্মদ এবং উপব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলামের অফিশিয়াল মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।