কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গম কাটা-মাড়াইয়ের কাজে পুরোদমে শুরু হয়েছে। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে কৃষি শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার আবহাওয়া গম আবাদের অনুকূল থাকায় ফলন শুধু ভালোই নয়, বাম্পার ফলন হয়েছে। তা ছাড়া বর্তমান গমের বাজার দরও ভালো থাকায় গমে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ভেড়ামারা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে গম আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে গম আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এবার গম আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাতের ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ ব্যাপক হারে চাষ হয়েছে। এ জাতের গম এবার প্রায় ১ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া বারি-৩০ ও ৩২ জাতের গমও রয়েছে। গত মৌসুমে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৪ টন গম। এবার প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলার মোকারিমপুরে ৩৯৫, জুনিয়াদহে ৩১৫, চাঁদগ্রামে ১৪৮, ধরমপুরে ২৮২, বাহাদুরপুরে ১৪৫, বাহিরচর ইউনিয়নে ৩০০ ও পৌরসভায় ১৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার মোকারিমপুর নতুন হাট গ্রামের কৃষক সুমন হোসেন বলেন, ‘এবার ৩ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘায় ১৫ মণ গম উৎপাদন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন ‘এবার গমের দানা খুব ভালো হয়েছে। গম চাষ উপযোগী আবহাওয়া থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া বাজারদর ভালো থাকায় যা আশা করেছিলাম তার চেয়েও লাভবান হয়েছি।’
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গম আবাদে ব্যয় হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। গমের ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৬ মণ। বর্তমান প্রতি মণ গমের বাজারমূল্য ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে কৃষি শ্রমিকেরাও বেজায় খুশি। আড়কান্দি গ্রামের কৃষি শ্রমিক জনি, নাজমুল, কাদব আলীরা বলেন, এবার কৃষকেরা তাঁদের বাড়ির পাশেসহ বিভিন্ন জায়গায় ২ বিঘা কোথাও ৪ বিঘা, এভাবে গম চাষ করেছেন। এখানে গম কাটার মেশিন আসেনি। তাই আমরা চুক্তিতে গম কাটা ও মাড়াই করে তাঁদের ঘরে দিয়ে আসছি। তাঁরা আরও বলেন, ৩ বিঘা জমির গম কাটা ও মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমরা ৮ মণ গম পাব।
কৃষি অফিসের প্রণোদনা পেয়ে গত বছর হার্ভেস্টর মেশিন কিনেছিলেন জগস্বর গ্রামের জুয়েল হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে মাঠের পর মাঠ গম আবাদ হয়েছে, সেখানে গিয়ে হার্ভেস্টর মেশিনের মাধ্যমে কাটা ও মাড়াই ও ঝাড়াই করে বস্তায় গম পুরে বাড়ি দিয়ে আসছি। এতে বিঘায় খরচ হচ্ছে দুই হাজার টাকা। ফলে কৃষকের ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।’ এ ছাড়া তিনি ৪ বিঘা গমের আবাদ করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়খুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারেও ভালো দাম রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক সংকটের বিকল্প হিসেবে বড় মাঠে গম কাটা ও মাড়াই ব্যবস্থা হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন কৃষকেরা।’