খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডেটাবেস তৈরির জন্য উপকারভোগীদের কার্ড অনলাইনে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রংপুরের বদরগঞ্জে এ কাজ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার
হচ্ছেন কার্ডধারীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, কেন্দ্রীয় সার্ভারের ধীরগতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের বেলা কাজ করা যাচ্ছে না। ঝামেলা এড়াতে তাঁরা গভীর রাতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে ছুটছেন; কিন্তু রাত জেগেও যাচাই-বাছাই করতে না পেরে কেউ কেউ সকালের দিকে বাড়িতে ফিরছেন।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন ১৯ হাজার ৪৬২ জন। তাঁদের কার্ডগুলো অনলাইনে যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য ১১ আগস্ট আপলোড দেওয়া হয়। এরপর ইউপি কার্যালয়ে যাচাই কাজ চালাতে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়; কিন্তু কার্যালয়ের তথ্যকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা সার্ভারের ধীরগতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারছেন না।
উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নে গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি কার্যালয়ের সামনে অনেক নারী-পুরুষ ভিড় করে আছেন। কেউ কেউ মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন বিদ্যুৎ ছিল না।
সেখানে কথা হয় আমরুলবাড়ি বিলেরপাড় গ্রামের আব্দুর রহমানের সঙ্গে। পেশায় একজন ভ্যানচালক। তিনি জানান, ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড যাচাইয়ের জন্য এসেছেন। এ কাজে অনলাইনে কার্ডধারীর ছবি নেওয়া হয়। এর জন্য তিনি দুই রাত ধরে সেখানে অবস্থান করছেন।
আসমতপাড়া গ্রামের মছুদা বেগম অভিযোগ করেন, মাগরিবের পর তিনি ৮ কিলোমিটার হেঁটে পরিষদে আসেন এবং সকালে বাড়ি যান। তিন দিন ধরে এভাবে আসা-যাওয়া করছেন; কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
এ সময় কার্যালয়ের সামনে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শেখকে দেখা যায় বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করতে। তিনি বলেন, বেলা ২টার পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড অনলাইনে যাচাই-বাছাই করার কথা বলেছে সরকার; কিন্তু ওই সময়ে ওয়েবসাইটে থাকে পুরো জ্যাম। আবার কখনো জ্যাম খুললেও থাকে না বিদ্যুৎ। রাত ১২টার পর ওয়েবসাইট ঠিক হয়ে যায়; কিন্তু গভীর রাতেও বিদ্যুৎ থাকছে না। অনেকে সারারাত জেগে থেকেও কাজ করাতে পারছেন না। তাঁদের হয়রানি দেখে নিজেরও খারাপ লাগছে; কিন্তু করার কিছুই নেই। হাতে সময় নেই। ২১ আগস্ট যাচাই-বাছাই শুরু করেছি। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। ইউনিয়নের ২ হাজার ১২৪টি কার্ডের মধ্যে যাচাই হয়েছে প্রায় ৫০০টি।
এদিকে হাটখোলাপাড়া গ্রামের মজিদুল ইসলাম দাবি করেন, যাচাই-বাছাই করতে কোনো টাকা না লাগলেও তাঁদের কাছ থেকে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে যাচাইকারী নয়ন রায় বলেন, সরকারিভাবে যাচাইয়ের পর প্রত্যেক কার্ডের বিপরীতে ১৫ টাকা পাওয়া যাবে; কিন্তু এখন বাইরে থেকে কম্পিউটার এনে চারজন রাত জেগে কাজ করছেন। তাই ২০ টাকা করে নিচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রংপুরে ওয়েবসাইট চালু হয় বেলা ২টায়। কাজ করার কথা বিকেল ৫টা পর্যন্ত; কিন্তু সকাল পর্যন্তও ওয়েবসাইট চালু থাকে। সুবিধার্থে কেউ কেউ রাতে কাজ করছেন। হাতে সময় কম থাকার কারণে চেয়ারম্যানরাও রাতে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন, আর টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
রংপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর বদরগঞ্জ জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ফখরুল আলম জানান, কিছুদিন ধরে দিনে কোনো লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে না। তবে রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ মেগাওয়াট থাকলেও বরাদ্দ যাওয়া পাচ্ছে ১০ মেগাওয়াট। এ কারণে তখন কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।