হাসনাত শোয়েব ও সাহিদ রহমান অরিন, ঢাকা
প্রিয় দলের জার্সি সংগ্রহ করা অনেকের আগ্রহ ও ভালোবাসার বিষয়। তাই বলে ৩ হাজার জার্সি সংগ্রহ করা নিশ্চয়ই কোনো সাধারণ সমর্থকের কাজ নয়! গত ২৫ বছর এ অবিশ্বাস্য কাজটিই করেছেন নেদারল্যান্ডসের ফুটবল ভক্ত ও সংগ্রাহক আরিয়ান ভাইনগার্ড।
‘এখন আপনাকে এই সংগ্রহের প্রদর্শনী করতে হলে একটি জাদুঘর ভাড়া করতে হবে’—গতকাল শনিবার মেসেঞ্জারে আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন ৪৩ বছর বয়সী ভাইনগার্ড।
১৯৯৭ সালে ভাইনগার্ডকে ইংলিশ ক্লাব এভারটনের একটি জার্সি দেওয়া হয়। তখন থেকে জার্সি সংগ্রহের নেশা চাপে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত জার্সি সংগ্রহশালাটি এখন তাঁর। ভাইনগার্ডকে নিয়ে এরই মধ্যে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। গতকাল আজকের পত্রিকাও যোগাযোগ করেছে তাঁর সঙ্গে।
কীভাবে এই পাগলামি ভর করেছে তাঁর ওপর? ভাইনগার্ডের ভাষ্য, ‘কেন এটা (জার্সি সংগ্রহ) করি, নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। হয়তো ফুটবলকে ভীষণ ভালোবাসি বলেই। স্টেডিয়ামে গিয়ে জার্সি না পেলে স্কার্ফ সংগ্রহ করি। আসলে শার্টের চেয়ে স্কার্ফ বা পিন সংগ্রহ করলেই ভালো হতো। সেগুলো সস্তা, রাখতেও জায়গা কম লাগে।’
ভাইনগার্ডের ঘরে ঢুঁ মারলেই সত্যতা মিলবে। জার্সির ভারে দেওয়ালগুলোই যেন নুইয়ে পড়েছে। এমনকি দরজা-জানালাগুলোও এই ‘যন্ত্রণা’ থেকে বাদ পড়েনি। প্রথম দেখায় তাঁর ঘরকে জার্সির কারখানাও মনে হতে পারে।
করোনা মহামারির আগে জার্সি কিনতে ভাইনগার্ড বছরে পাঁচবার ভ্রমণে যেতেন। বেশির ভাগ সময়ই গন্তব্যস্থল ছিল ব্রিটেন। সংগ্রহ বাড়ানোর গল্পটাও শোনালেন তিনি, ‘ক্লাবের দোকান (মার্চেনডাইজ স্টোর) থেকেই জার্সি কিনতে পছন্দ করি। যদিও সব সময় সম্ভব হয় না। মাঝে মাঝে অনলাইন থেকেও কিনতে হয়।’
অখ্যাত দল ও দুষ্প্রাপ্য জার্সিগুলোই নিজের দখলে রাখতে পছন্দ করেন ভাইনগার্ড। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দলের জার্সি আছে কি না, জিজ্ঞেস করতেই ভুটান জাতীয় দলের একটি জার্সির ছবি পাঠালেন তিনি। ৩ হাজার জার্সি থেকে সবচেয়ে পছন্দেরটি বের করা কঠিন। তবু একটিকে বেছে নিতে বলা হলে ই-মেইলে এফসি খ্রোনিঙেনের জার্সির ছবি পাঠান ভাইনগার্ড। বলেন, ‘এটি আমার ঘরের ক্লাব খ্রোনিঙেনের পুরোনো জার্সি। বেশ দুর্লভ। এই ম্যাচ জার্সির বয়স প্রায় ৪০ বছর।’
নিজের সংগ্রহের জার্সিগুলোর প্রদর্শনীর জন্য ভাইনগার্ড একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন। এর কারণও খুলে বললেন তিনি, ‘এর মাধ্যমে অন্যরা জানতে পারবে, আমার সংগ্রহে কী আছে। জার্সিতে যদি কখনো আগুন লাগে কিংবা চুরি হয়, তাহলে বিমা কর্তৃপক্ষকে প্রমাণ দেওয়া যাবে।’
জার্সি সংগ্রহের এই নেশা কবে থামাতে চান— ভাইনগার্ডের সাফ জবাব, ‘থামাথামির ইচ্ছে নেই। যত দিন বেঁচে আছি, সংগ্রহ বাড়াতেই থাকব। জাদুঘর গড়ে তোলার কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছি।’
নিখাদ ফুটবলপ্রেমীরাও নিশ্চয়ই চাইবেন, ভাইনগার্ডের সংগ্রহশালা হোক আরও বড়।