যশোর প্রতিনিধি
ছয় বছর ধরে নিখোঁজ যশোরের বাঘারপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাচারের শিকার জাহাঙ্গীর ভারত ও লিবিয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি ফিরে গত পাঁচ বছরে ঘটে যাওয়া মর্মন্তুদ কাহিনি শোনালেন তিনি।
এদিকে জাহাঙ্গীরকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁর পরিবার। তবে দেশে ফিরে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। ভালো উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁকে বিদেশে পাচার করেন একই গ্রামের মানিক মিয়া।
জাহাঙ্গীর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের দোহাকুলা গ্রামের মৃত মাজেদ বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন।
দোহাকুলা গ্রামের গহর শিকদারের ছেলে মানিক ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীরকে চাকরির কথা বলে ভারতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর শ্যালক খুলনার শিরোমণি এলাকার বাগুনবাড়িয়া গ্রামের ইলিয়াসের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করত ইলিয়াসের পরিবার।
মথুরায় নিয়ে জাহাঙ্গীরকে ভাঙারি সংগ্রহের কাজে লাগানো হয়। সেখানে তাঁকে ময়লা-আবর্জনা থেকে ভাঙারি খুঁজে আনতে হতো। প্রতিদিন এক মণ ভাঙারি না পেলে তাঁর ওপর চলত নির্যাতন। খেতে দেওয়া হতো না।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাকে হত্যাচেষ্টাও করে ওরা। ব্যর্থ হয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে অজ্ঞান করে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। ভারতীয় দালাল আমাকে লিবিয়া পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি সাত লাখ টাকায় আমাকে বিক্রি করা হয়েছে। এ সময় আমার পরিবারকে বলা হয়, আমি ভারতে একজনকে খুন করেছি। তাই ভারতের জেলখানায় বন্দী আছি।’
লিবিয়ায় একটি শ্যাম্পু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সুইপারের কাজ দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরকে। থাকতে দেওয়া হয় শ্রমিকদের জন্য নির্মিত বোর্ডিংয়ে। থাকতে হতো অন্ধকার ও নোংরা ঘরে। বিশাল কারখানার যাবতীয় নোংরা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হতো। প্রতিদিন কাজ শেষ করতে না পারলে চলত নির্যাতন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুযোগ বুঝে একদিন টহলরত লিবিয়া পুলিশের কাছে ধরা দেন। নিজেকে অনুপ্রবেশকারী পরিচয় দিয়ে বিস্তারিত বলেন। কয়েদখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বিনা বিচারে চার বছর জেল খাটার পর লিবিয়া সরকার ভারতের মুম্বাই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তাঁকে। মুম্বাইয়ের জেলখানায় তিন দিন অবস্থান করেন।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, এরপর তাঁকে কলকাতার দমদম জেলখানায় পাঠিয়ে দেয় মুম্বাই পুলিশ। ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে জাহাঙ্গীরকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন কলকাতার আদালত। জাহাঙ্গীরের কারাবাস শেষ হলে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে কলকাতা পুলিশ। এরপর ২ ডিসেম্বর ভোরে বাঘারপাড়ার চৌরাস্তায় ছেড়ে দেয় সাতক্ষীরা পুলিশ।