অনেক দিন ধরেই শুটিংয়ের খরায় ভুগছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসি। মাঝে পিকনিকের জন্যও ভাড়া দিতে দেখা গেছে এফডিসির আঙিনা। নতুন বছরের শুরুতেই সেই খরা কাটিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে বিএফডিসি। ৯ জানুয়ারি এফডিসি ঘুরে জানা গেল, ২ ও ৭ নম্বর ফ্লোরে চলছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমার শুটিং। ৯ নম্বর ফ্লোরে চলছে বারান্দা মিডিয়ার শুটিং। ৮ নম্বর ফ্লোরটি ভাড়া দেওয়া আছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার কাছে। এ ছাড়া কালার গ্রেডিং, সম্পাদনার কাজও চলছে পুরোদমে।
গত মাসেও হিমেল আশরাফের ‘রাজকুমার’ ও সানী সানোয়ারের ‘এশা মার্ডার’ সিনেমার শুটিং হয়েছে চলচ্চিত্রের এই আঁতুড়ঘরে। কর্মব্যস্ততা ফিরলেও হাসি ফেরেনি এফডিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখে। কারণ, এখনো অনিয়মিতই রয়ে গেছে তাঁদের বেতন। গতকাল পর্যন্ত এফডিসির ২১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দুই মাসের বেতন পাননি।
এফডিসির এই দশা নতুন কিছু নয়। এক দশক ধরেই ঝিমিয়ে পড়া সিনেমার মন্দা হাওয়ার ঝাপটা এসে পড়ছে এফডিসিতেও।
কমপ্লেক্সের কাজ শুরু হওয়ায় ভাঙা পড়েছে তিনটি শুটিং ফ্লোর। যে কয়টা ফ্লোর আছে, সেখানেও কাজ হয় খুবই অনিয়মিত। লাইট, ক্যামেরা কিংবা এডিটিং প্যানেল থেকেও কমেছে আয়। সব মিলিয়ে তাই মাঝেমধ্যেই আটকে পড়ে কর্মচারীদের বেতন। এ ছাড়া, রাজস্বভুক্ত না হওয়ায় অবসরের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনও পাচ্ছেন না ঠিকমতো।
গত রোজার ঈদের আগে আন্দোলন করে বেতন ও বোনাস আদায় করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। তাঁদের সেই শঙ্কা সত্যি হয়ে ধরা দিল। এ বিষয়ে কথা বলতে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। বরং, কথা বলতে বলেন এফডিসির ফ্লোর অ্যান্ড সেটের প্রধান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে।
হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এখন প্রতি মাসে এফডিসিতে ফ্লোর, ক্যামেরা, ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, ভিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু বেতন ও আনুষঙ্গিক সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তাই বেতন নিয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে বারবার। ফলে এফডিসিতে কাজ ফিরলেও হাসি ফেরেনি কর্মীদের মুখে।’
কমপ্লেক্সের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এসব সমস্যা কেটে যাবে বলে আশাবাদী এফডিসির এই কর্মকর্তা। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘কমপ্লেক্সের কাজটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমাদের আয় অনেক বাড়বে। সেখানে কয়েকটা শুটিং ফ্লোর হবে, সিনেপ্লেক্স হবে। তখন আমরা সব খরচ মিটিয়ে আগের মতো সরকারের রাজস্বেও অবদান রাখতে পারব।’