জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ দিনের মাথায় এর প্রভাব পড়েছে কুষ্টিয়ার বাজারে। বাজারের সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চাল থেকে শুরু করে কাঁচা মরিচ সবকিছুরই দাম বাড়তির দিকে। এ পরিস্থিতিতে সব চেয়ে বিপাকে পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
গত মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়ার বড় বাজার, পৌরবাজার, চৌড়হাস বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে আরেক দফায় বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা।
গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বাসমতি চাল মঙ্গলবার বিক্রি হয় ৮২ টাকা দরে। ৪৮ টাকার আটাশ চাল বিকি হয় ৫২ টাকায়, ৫৬ টাকার কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি এবং ৬৮ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা প্রতিকেজি।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন গত ১৫-২০ দিনের মধ্যে চালের দাম বাড়ল দুই দফা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন এবং পরিবহনের কথা বলে এবারে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানালেন তাঁরা।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী নিশান জানান, কয়েক দিন আগে ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং ধান সংকটের কথা বলে কেজিতে দুই টাকা বাড়ানো হয়েছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আবারও বাড়ানো হলো চালের দাম। ধীরে ধীরে যেন সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। শুধু চালের দামই বৃদ্ধি না। চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম।
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন সাধু বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ সময় উত্তরের জেলা থেকে ধান কিনে আনি। আবার সেই ধান থেকে চাল বানিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। আর আনা-নেওয়ার কাজ আমরা ট্রাকের মাধ্যমে করে থাকি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাক মালিকেরা। সে কারণে এর প্রভাব কিছুটা হলেও চালের বাজারে পড়ছে।’
এদিকে কাচা মরিচ কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ প্রতিকেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে।
মাসুদ করিম নামের এক হকার বলেন, ‘মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করি, সংসারে চারজন সদস্য। এ টাকা সংসার চালাতে চোখে সরষের ফুল দেখছি। এখন আবার যে হারে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে হয়তো না খেয়ে থাকার উপক্রম হবে।’
কথা হয় শহরে বিভিন্ন এলাকায় কুলফি মালাই বিক্রেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে। দুই ছেলে ১ মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তাঁর।
নুরুল বলেন, ‘কুলফি বিক্রি করে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ টাকা লাভ হয়। লাভের টাকা যখন হিসাব করি তখন ভালোই লাগে, কিন্তু বাজারে গেলে মন খারাপ হয়ে যায়। সন্তানদের লেখাপড়া এবং সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখন একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে পার করছে। এ কারণে দ্রব্যমূল্য কিছুটা চড়া। তবে আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোরভাবে তদারকি করছি।’