ছোট একটু জায়গা। চারপাশে কয়েকটি গাছ। জায়গাটি ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। বসানো হয়েছে পুলিশের পাহারা। তা-ও প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে এখানেই খেলতে আসে কলাবাগানের বাসিন্দা তুষার (১১)। কিন্তু তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই, আজকাল সেখানে খেলতে গেলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দিচ্ছেন। তুষার ভালো করেই জানে, কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবু জায়গাটা হারাতে চায় না তুষার ও তার বন্ধুরা।
মাঠ উদ্ধারে বড়দের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছে তুষারের মতো শিশুরাও। ‘তেঁতুলতলা মাঠ আমাদের প্রাণের দাবি’ ব্যানারে স্থানীয় ব্যক্তিরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল মঙ্গলবারও মাঠ রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। নিউ মডেল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন তুষার আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই এ মাঠে খেলছি। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর পুলিশ মাঠে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। তারপরও মাঝেমধ্যে ঢুকে যাই। আমরা চাই না এখানে ভবন হোক, আমরা মাঠে খেলতে চাই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলতলা মাঠটি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২০ সালের দিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই মাঠে ‘কলাবাগান থানার জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রতিবাদের মুখে তখন সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হলেও চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মাঠ ঘিরে দেওয়া হয়। বসানো হয় পুলিশের পাহারা। ওই মাঠে খেলতে যাওয়ায় চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কয়েকজন শিশুকে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে কলাবাগান থানা থেকে প্রত্যাহারও করা হয়।
কলাবাগানের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন (৪৮) বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠে আমাদের সন্তানেরা খেলাধুলা করে। এ মাঠে ভবন হোক, এটা আমরা মানতে পারব না।’
মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না বলেন, ‘বিভিন্ন সময় মিনি ফুটবলসহ নানা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় মাঠে। এ ছাড়া লাশ গোসল, জানাজাসহ নানা সামাজিক কাজও হয়। আমরা মাঠটি হারাতে চাই না।’
পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ‘বিগত তিন বছর ধরে এই মাঠ রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছি। বহুবার দখলের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি।’
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব শিশু অধিকার রক্ষা নানা আইনের উল্লেখ করে বলেন, ‘২০০০ সালের ৩৪ নম্বর আইন অনুযায়ী, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গায় শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, আইনের তোয়াক্কা না করেই মাঠটিতে থানার ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই মাঠের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা ভূমি মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রশাসনের বিষয়।’
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বলেন, ‘তেঁতুলতলাকে মাঠ করতে সব এলাকাবাসী যে চান, বিষয়টা এমন না। অনেকেই বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে জায়গাটি দখলের চেষ্টা করেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে আইন ও পদ্ধতিগতভাবে পুলিশ বিভাগের কাছে জমিটা হস্তান্তর করেছে।’